শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট SSC HSC JSC

খাদ্যে ভেজাল অনুচ্ছেদ SSC HSC JSCশ্রমের মর্যাদা রচনা সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনি জানতে চান? তাই শ্রমের মর্যাদা রচনা এখন আপনার সামনে তুলে ধরা হবে। শ্রমের মর্যাদা রচনা জানতে আপনাকে আর্টিকেলটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা মধ্য থেকে শ্রমের মর্যাদা রচনাটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা।
শ্রমের-মর্যাদা-রচনা
তাই আপনারা যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন, তারা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে শ্রমের মর্যাদা রচনাটি পড়ে যেতে পারেন। তাহলে আর দেরি না করে পড়ে ফেলুন শ্রমের মর্যাদা রচনাটি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ শ্রমের মর্যাদা রচনা ১২ পয়েন্ট SSC HSC JSC

ভূমিকা

কর্মই জীবন। শ্রম ছাড়া জীবনে উন্নতির প্রত্যাশা করা বৃথা। শ্রমের মাধ্যমে জীবনে যে সাফল্য আসে এবং তার ফলে যে আনন্দ ও তৃপ্তি পাওয়া যায় তা সত্যিই নির্মল ও অতুলনীয়। মনীষী কারলাইলের সৃষ্টিতে দুই শ্রেণীর মানুষ শ্রদ্ধার পাত্র। এক শ্রেণী হলো কৃষক ও শ্রমশিল্পী- যারা পরিশ্রমের মাধ্যমে অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করে। আর অন্য শ্রেণীতে রয়েছে জ্ঞান সাধক- যারা আত্মার খাদ্য সংস্থানের ব্যাপিত। মূলত শ্রমের মাধ্যমে মানুষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কথায় বলে......

"পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি"

শ্রম ও জীবন

মানুষকে জীবনে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে অহরহ লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। জীবন অর্থ কর্মক্ষেত্র, আর কর্মক্ষেত্র ভয়াবহ সমস্যা সঙ্গকুল। জীবনব্যাপী কঠোর শ্রমের মাধ্যমে মানুষকে জীবন যুদ্ধে নিয়োজিত থাকতে হয়। আমরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের পরিসরে পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহের প্রয়াস পাচ্ছি। পরীক্ষার ফলাফল থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রম অপরিহার্য। সুতরাং দেখা যায়, জীবন ও পরিশ্রম পরস্পর সম্পূরক।

শ্রমের প্রয়োজনীয়তা

মানব জীবনে রোমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শ্রম ছাড়া মানুষ কখনো উন্নতি করতে পারে না। জীবনে আন্ত প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে মানুষকে নির্লস পরিশ্রম করতে হয়। এই পৃথিবীতে যত বড় বড় কাজ সমাধা হয়েছে সেগুলোর মূলে রয়েছে শ্রম। এই পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি শ্রমশীল সে জাতি তত বেশি উন্নতি লাভ করেছে। পরিশ্রম দ্বারা মানুষ জীবজগতে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে এবং প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর ওপর নিজেদের প্রভাব কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে শ্রমশীলতা উন্নতির পূর্বশর্ত। মনীষী ব্রাভো বলেছেন......

"খোদার বিশ্বাসের পরেই আসে শ্রমের ওপর বিশ্বাস"

উন্নত দেশে শ্রমের মর্যাদা

উন্নত দেশগুলোতে শ্রমের মর্যাদা যথাযথ স্বীকৃতি লাভ করেছে। আর এই স্বীকৃতির জন্য সেখানকার জনসাধারণ অত্যন্ত কর্মঠ। ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের কল্যাণ সাধনের জন্য তারা সচেষ্ট এবং তাদের সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা আমাদের দেশের মানুষের মতো কোন আজকেই ছোট বলে মনে করে না। সমাজের উঁচু স্থলের লোকেরা অতি নগণ্য কাজও অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পাদন করে। কাজকে ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে বলেই তারা উন্নতির চরম শিখরে অহরণ করছে।

মানসিক উন্নতিতে শ্রম

মানসিক উন্নতির জন্য শ্রম অপরিহার্য। কথায় আছে......

"অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা"

যে লোক শ্রমবিমুখ তার মনে কখনো সুচিন্তা ও সদ্ভাব উদয় হয় না; বরং তার মন কুচিন্তার আশ্রয়স্থল হয়ে পড়ে। পরিশ্রমী ব্যক্তির মন ও মস্তিষ্ক কুচিন্তা থেকে সর্বদা দূরে থাকে। সে সর্বদা নিজেকে উৎপাদন ও উন্নয়নের অনুষঙ্গ বলে ভাবতে শিখে এবং তার আত্মসম্মান ও মানসিক পরিতৃপ্তি বৃদ্ধি পায়।

পৃথিবীর শ্রমশীল ব্যক্তিত্ব

পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তি ও মনীষীদের সকলেই কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, আইনস্টাইন এক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। দোজাহানের রাজাধিরাজ হয়েও তিনি শ্রমের মাধ্যমে অন্নের সংস্থান করতেন। ইসলাম ধর্মের বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠার পেছনে তার অসীম ধৈর্য ও পরিশ্রমী মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। হযরত ফাতেমা (রাঃ) নিজের হাতে যাতা ঘুরিয়ে আটা বানাতেন। কুরানের অনলিপি ও টুপি তৈরি করে জীবিকার্জন করতেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব। বস্তুত পৃথিবীর মহান ব্যক্তিরা অমরত্ব লাভ করেছেন তাদের নিরন্তর শ্রম-সাধনা দাঁড়া অর্জিত জ্ঞান ও সৃষ্টির গৌরবে।

শ্রম ও সভ্যতা

শ্রমের নিরন্তর সাধনায় গড়ে উঠেছে সভ্যতার সুরম্য প্রাসাদ। যুগে যুগে মানুষের শারীরিক ও মানসিক শ্রম বিনিয়োগে সমগ্র পৃথিবীর অবকাঠামো, শিল্পকলা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অকল্পনীয় উন্নতি অর্জিত হয়েছে। পৃথিবীতে সুন্দর ও বাসযোগ্য করার জন্য সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষ চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাই শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সভ্যতার ভিত। সভ্যতা বিনির্মাণে শ্রমজীবী মানুষের অসামান্য অবদান স্বীকার করে নজরুল তাই উচ্চারণ করেছেন......

"গাহি তাহাদের গান,
ধরণের হাতে দিল যারা আমি সকলের ফরমান,
শ্রম-কিণাংক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি তলে,
এস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালিভরে ফুলে ফলে।

প্রকৃতিতে শ্রমশীলতার উদাহরণ

প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া অনুষজ্ঞ নিজ কর্মে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত। প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্র আপন-আপন কক্ষপথে ঘুরছে। সাগর-নদী বইছে অনবরত। বৃক্ষ নীরব শ্রমে আন্তবিকাশের সাধনায় ব্যস্ত। ছোট্ট পিপীলিকার ছয়টি পা প্রতিমুহূর্তে ব্যস্তভাবে ছুটছে। ক্ষুদ্র মৌমাছি মধু সঞ্চয়ে ভনভন করে ঘুরছে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। পশুপাখি মুহূর্তের জন্য আলসের সুযোগ পায় না। যদিও তাদের জীবনে জৈবিকভাবে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কোন প্রয়োজন নেই। অপরদিকে মানুষকে জীবনের অসংখ্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই তাকে হাত গুছিয়ে বসে থাকলে চলে না। স্রষ্টার দেওয়া শরীর ও মেধাগত শক্তি যথাযথ ব্যবহার করেই তাকে আন্ত প্রতিষ্ঠা করতে হয়। পালন করতে হয় অসংখ্য দায়িত্ব।

আমাদের দেশে শ্রম

কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের এক ধরনের অনীহা ও ঘৃণা রয়েছে। ফলে শিক্ষিত সমাজের একটি বিরাট অংশ কায়িক শ্রম থেকে দূরে সরে আছে। চরম বেকারত্ব ও আর্থিক অনটন সত্ত্বেও তারা পরিশ্রম বিমুখ। তারা যে কোন উপায়ে একটি দাপ্তরিক চাকরি জোগাড় করতে ব্যস্ত। যদিও বাংলাদেশে দাব্তরিক চাকরির সুযোগ খুবই সীমিত। ফলে বেকারত্ব হতাশা দুর্নীতি ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে নানামুখী সামাজিক অবক্ষয়। এরই ফলশ্রুতিতে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে আজও আমরা কাঙ্খিত উন্নতি সাধন করতে পারিনি।

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পরিশ্রমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি নিজেও শ্রমিকদের সাথে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন। শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকানোর আগেই তিনি তার পারিশ্রমিক পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। শ্রমকে উৎসাহিত করে ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল করার জন্য মহানবি (সাঃ) অনেক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তিনি ভিখারীর হাতে কুঠার উঠিয়ে দিয়েছেন। শ্রমিককে তিনি সম্বোধন করেছেন "ভাই" বলে।

শ্রমের দৃষ্টান্ত

পুরো বিশ্বে যারা চিরবরেণ্য ও স্মরণীয় তারা ছিলেন শোরুমের এক মূর্ত প্রতীক। নিরলস পরিশ্রমের দরুন ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম আজও সোনার অক্ষরে লেখা রয়েছে। এই শ্রম শিক্ষা সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প, অর্থনৈতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা প্রতিটি ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছে। শ্রমের দৃষ্টান্ত মূর্ত প্রতীক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। তিনি মক্কা থেকে মদিনায়, হের গুহায় ছুটে চলেছিলেন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছেন তাইফের ময়দানে। তিনি বহু ত্যাগ তিতিক্ষার পর ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। তাছাড়াও শ্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন।

উপসংহার

এই পৃথিবী কর্ম ও শ্রমমুখর। তাই দেশে দেশে শ্রমজীবী মানুষের বিজয় ঘোষিত হচ্ছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক কল্যাণে অবশ্যই শ্রমের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন। দেহকে নীরোগ ও মনকে সতেজ করে শ্রম। শ্রমের যথার্থ মর্যাদা দানের মাধ্যমে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা শ্রম বিমুখ জাতি বলে বাংলাদেশের অর্থ সামাজিক উন্নতি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

শ্রমের মর্যাদা রচনা আপনার কাছে কেমন লেগেছে? কোথায় কি কোন বিষয় যোগ করা প্রয়োজন? বা কোথাও কি কোন বিষয় বাদ দেওয়া প্রয়োজন? অবশ্যই কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url