স্বদেশপ্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট SSC HSC JSC

স্বদেশ প্রেম অনুচ্ছেদ - সকল ক্লাসস্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট সম্পর্কে নিশ্চয় জানতে চান? তাই আমরা এখন স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট আপনার সামনে তুলে ধরব। স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট জানতে আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে হবে।
স্বদেশ-প্রেম-রচনা-২০-পয়েন্ট
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে স্বদেশ প্রেম রচনাটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। কারণ বিভিন্ন পরীক্ষাতেই লিখতে বলা হয়ে থাকে স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট।

পোস্ট সূচিপত্রঃস্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট SSC HSC JSC

  1. ভূমিকা
  2. স্বদেশপ্রেম কী
  3. স্বদেশপ্রেমের উৎস
  4. স্বদেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্য
  5. স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ
  6. স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি
  7. স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ
  8. স্বদেশপ্রেমের ভিন্নতর বহিঃপ্রকাশ
  9. স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম
  10. স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে পার্থক্য
  11. সাহিত্যের আয়নায় দেশপ্রেম
  12. ছাত্র জীবনে স্বদেশপ্রেমের শিক্ষা
  13. বাঙালির স্বদেশপ্রেম
  14. স্বদেশপ্রেম শিক্ষা
  15. স্বদেশপ্রেমের উপায়
  16. স্বদেশপ্রেমের প্রভাব
  17. স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত
  18. স্বদেশপ্রেম ও রাজনীতি
  19. বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও দেশপ্রেম
  20. উপসংহার

ভূমিকা

স্বদেশ প্রেম মানুষের মহৎ গুণাবলীর অন্যতম। একজন মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, যে দেশের মাটি, আলো বাতাসে তার জীবন বিকশিত হয়েছে সেটাই হলো তার স্বদেশ। স্বদেশের প্রতি প্রেম ভালবাসা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জীবনের সফলতার জন্য, দেশ ও জাতির কল্যাণের ক্ষেত্রে স্বদেশ প্রেমের বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। একজন স্বদেশ প্রেমের প্রতি সদা সর্বদা সচেতন হতে হবে। মাতৃভূমির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,

ও আমার দেশের মাটি,
তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ী,
তোমাতে বিশ্ব মায়ের আঁচল পাতা।

স্বদেশপ্রেম কী

স্বদেশ প্রেম হল নিজের দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আকর্ষণ অনুভব করাকে বোঝায়। এছাড়াও নিজ দেশের প্রতি প্রবল অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা ও যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে। গর্ভধারণকারিনী জননী যেমন তার সন্তানকে ভীষণভাবে ভালবাসে, এমনিভাবে দেশ মাটি কাকেও মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই শ্রদ্ধা করতে ও ভালোবাসতে শেখে। দেশ ও দেশের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ ও ভালবাসা তা থেকেই জন্ম দেশপ্রেমের। জননী, জন্মভূমি স্বর্গের চাইতেও গরীয়সী এবং মহিমায় দীপ্ত। তাইতো কবি দীজেন্দ্রলাল রায়ের সেই গানটি আজও স্বদেশপ্রেমী মানুষের প্রার্থনা...

আমার এ দেশেতেই জন্ম যেন,
এই দেশেতেই মরি।

স্বদেশপ্রেমের উৎস

প্রতিটা মানুষ নিজেকে অনেক ভালোবাসে। আর নিজের প্রতি অনেক ভালোবাসা থেকেই জন্ম নেয় স্বদেশের প্রত্যেকটি জীবের মধ্যেই এই স্বদেশ প্রতি ভালবাসা বিদ্যমান পশু বনভূমি ছেড়ে লোকালয়ে ছটফট করে। আবার পাখিকে নীড়চৎ করলে তার মর্মভেদী আর্তনাদ বাতাস ভারি করে তোলে। নিজ আবশ্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই এটি হয়। আর নিজ আবাসের প্রতি ভালোবাসা থেকেই জন্ম নেয় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা। স্বদেশের মাটি, বাতাস, পানির সঙ্গে আমরা অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। তাই এগুলির প্রতি মমত্ববোধ থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশপ্রেম।

স্বদেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্য

আশ্রস্থলের প্রতি আকর্ষণ জীবনের স্বভাব যার ধর্ম। গরুর জন্য গোয়াল, বাঘের জন্য গুহা, পাখির জন্য নীড় প্রত্যেকের নিজস্ব আবসস্থল আছে। মানুষের স্বদেশ প্রেম একটি বিশেষ আদর্শ্তাড়িত আন্তরিক প্রেরণা। অন্যান্য প্রাণীর ঐতিহ্যবোধ নেই, নেই সংস্কৃতি চেতনা-মানুষের এগুলো আছে।সেই সাথে আছে ইতিহাসের পাতা থেকে আহরিত জ্ঞান। তাই দেশের মাটির প্রতি মমত্ববোধের সাথে মিশে থাকে শ্রদ্ধা, প্রীতি ও গৌরববোধের আকাঙ্ক্ষা। কবির ভাষায়......

স্বদেশ প্রেম যত সেই মাত্র অবগত,
বিদেশেতে অধিবাস যার,
ভাব তুলি ধ্যানে ধলে,
চিত্রপটে চিত্র করে,
স্বদেশের সকল ব্যাপার।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ

মানুষ সমগ্র বিশ্বের বাসিন্দা হলেও একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সে বেড়ে ওঠে। একটি বিশেষ দেশের অধিবাসী হিসেবে এসে পরিচয় লাভ করেন। এ দেশি তার জন্মভূমি, তার স্বদেশ। মানুষ স্বদেশে জন্মগ্রহণ করে ও স্বদেশের ভালোবাসায় লালিত-পালিত হয়। নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সকল উপাদান সে স্বদেশের গৌরবে গৌরবান্বিত হয় এবং স্বদেশের অপমানে অপমানিত হয়। স্বদেশের স্বাধীনতা ও মান-মর্যাদা রক্ষার জন্যই নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকেন। তাই কবি লিখেছেন.......

মিছা মনিমুক্তা হেম স্বদেশের প্রিয়,
প্রেম তার চেয়ে রত্ন নয় আর।

স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি

স্বদেশের বিপর্যয়ের মুহূর্তে স্বদেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ পায়। দেশের দুর্দিনে দেশপ্রেমের পূর্ণ বিকাশ ঘটে এবং জন্মভূমি জননীর মতো সন্তানের দিকে কাতর নয়নে তাকায়, আর জননীর বেদনায় সন্তানের হৃদয় হয় বিদীর্ণ। জলাশয় থেকে বিচ্ছিন্ন করলে মাছ যেমন জলের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে তেমনি প্রবাস জীবনে ও মানুষের ভেতর স্বদেশপ্রীতি মূর্ত হয়ে ওঠে। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর স্বদেশে ফিরে এলে মনের অজান্তেই বেজে ওঠে......

আমার কুঠির খানি,
সে যে আমার হৃদয় রাণী।

স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ

স্বদেশপ্রেম মানব হৃদয়ে লালিত হয়। আর স্বদেশপ্রেম প্রকাশ পায় জাতীয় জীবনের দুঃসময়ে মানুষের কর্মের মাধ্যমে। স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষায়, স্বদেশের মানুষের কল্যাণ সাধনে মানুষের মনে স্বদেশপ্রেম জেগে উঠে। যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন তাদের নাম ও কীর্তি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের সে প্রেম ও আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে চিরকাল। স্বদেশের তরে জীবন উৎসর্গকারীরা সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই ভাষায় লিখেছেন......

ও আমার দেশের মাটি,
তোমার পরে ঠেকাই মাথা,
তোমাতে বিশ্বমায়ীর তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।

স্বদেশপ্রেমের ভিন্নতর বহিঃপ্রকাশ

কেবল দেশকে ভালোবাসার মধ্যে স্বদেশপ্রেম সীমাবদ্ধ নয়। দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়া যেমন শিল্পসাহিত্য, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজনীতি প্রভৃতির ক্ষেত্রে অবদান রাখাও স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। সম্প্রতি ২৬ শে মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা গাইতে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন মানুষের একত্রিত হওয়া স্বদেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। দেশের কল্যাণ ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে বিশ্বসভ্যতায় গৌরব বাড়ানো যায়।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম

স্বদেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিশ্বকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। স্বদেশপ্রেম কখনোই বিশ্ব প্রেমের বাধা হয় না। দেশপ্রেম যদি বিশ্ববন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সহায়ক না হয় তবে তা প্রকৃত দেশপ্রেম হতে পারে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই দেশপ্রেমের চেতনায় উৎসাহিত হতে হবে। যে নিজের দেশকে ভালোবাসে না সে অন্য দেশ, ভাষা, গোষ্ঠী যথা মানুষকে ভালবাসতে পারবেনা। তাই দেশপ্রেমের মধ্য দিয়েই বিশ্ব প্রেমের প্রকাশ ঘটে।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে পার্থক্য

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, জাতীয়তা ও স্বদেশপ্রেম যখন সুঙ্কীর্ণতার অন্ধকূপে বন্দি হয়ে উগ্র ছিন্নমস্ত রূপ ধারণ করে, তখন বিশ্বপ্রেম পদদলিত হয়। স্বদেশকে একমাত্র পরম প্রিয় মনে করে আমরা বিশ্বকে শত্রু মনে করি এবং তাকে ধ্বংস করার জন্য ধাবিত হয়। তখন শুভ বিচার-বুদ্ধি স্বদেশপ্রেমের অন্ধ আবেগে লুপ্ত হয়। তার ফলে পরপর হানাহানি এবং অবারিত রক্তক্ষয় অনিবার্যরূপে দেখা যায়। আর, নানা মারণাস্ত্র আবিষ্কার-এর জন্য সে হানাহানি অচিরেই ধারণ করে এক বিভীষিকাময় রূপ।

সাহিত্যের আয়নায় দেশপ্রেম

নানা কবি সাহিত্যিক তাদের কবিতা, কাব্য, নাটক, গান, উপন্যাস প্রভৃতি লেখনির মাধ্যমে তাদের দেশপ্রেমকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আধুনিক এই যুগে বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেমের বিকাশ ঘটে ব্রিটিশ আমল থেকে। নীলদর্পণ, আনন্দমঠ, মেঘনাদ বধ প্রভৃতি গ্রন্থে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, প্রমুখের সাহিত্যে দেশ প্রেমের প্রকাশ ঘটেছে।

ছাত্র জীবনে স্বদেশপ্রেমের শিক্ষা

স্বদেশ প্রেম মানুষের সহযাত প্রবৃতি হওয়া সত্বেও এই গুনটি তাকে অর্জন করতে হয়। সেজন্য ছাত্র জীবন থেকে দেশপ্রেমের দীক্ষা গ্রহণ করতে হয়। দেশের মাটি ও মানুষকে ভালবাসতে হবে। ছাত্র জীবনে ছাত্ররা যেই দেশপ্রেম অর্জন করে সেটি মনে আজীবন ধরে লালিত হয়। বর্ধমানের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। দেশের ভালো-মন্দ ভবিষ্যতে তাদের উপরে নির্ভরশীল। ছাত্র-ছাত্রীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে দেশের বিপদে আপদে। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে ছাত্রদেরকে জীবন উৎসর্গ করতে হবে। যেমনটা ছাত্রছাত্রীরা করেছিল ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা মর্যাদার রক্ষার আন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে।

বাঙালির স্বদেশপ্রেম

এ পৃথিবীতে যুগে যুগে অসংখ্য দেশ প্রেমিক জন্মেছেন। তারা নিজ দেশের জন্য আত্মত্যাগ স্বীকার করে নিজ দেশ ও বিশ্বের কাছে অমর হয়েছেন। আর বাংলাদেশেও তার দৃষ্টান্ত রয়েছে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানে স্বৈরশাসকের হাতে বাংলা ভাষার জন্য রফিক, রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতের আত্মদান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের আত্মদান করেছেন অসংখ্য ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মা-বোন সহ সাধারণ মানুষ। এখনো দেশের লক্ষ কোটি জনতা দেশের সামান্য ক্ষতির আশঙ্কায় বজ্র কণ্ঠে গর্জে ওঠে। তাই বলা হয়......

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,
 ভয় নাই ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান,
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই

স্বদেশপ্রেম শিক্ষা

মানুষ দেশকে ভালবাসতে খেলেই দেশের কল্যাণের জীবন উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি স্বদেশপ্রেম মানুষের সহজাত এক প্রবৃত্তি, এরপরেও এই স্বদেশ প্রেমের গুণটি অর্জন করতে হয়। এই স্বদেশ প্রেমের গুণ অর্জনের জন্য দেশের সুদিনে দেশের উন্নয়নে তৎপর থাকা প্রয়োজন। এছাড়া দেশের দুর্দিনে এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রেও জীবন উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি গড়ে তুলতে হবে। নিজ দেশের মাটি এবং মানুষকে ভালবাসতে শিখতে হবে। আর এর মাধ্যম দিয়েই স্বদেশ প্রেমের মহৎ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যাবে।

স্বদেশপ্রেমের উপায়

স্বদেশের উপকারে নাই যার মন,
কে বলে মানুষ তারে পশু সে জন।

পবিত্র ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে "দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ"। এই পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম নেই, যেই ধর্মের দেশকে ভালোবাসার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সবচাইতে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকই নিজ নিজ কর্মের সীমারেখায় স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দেয়। স্বীয় দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার মধ্যে দেশপ্রেম নিহিত। জাতির জন্য দেশের জন্য প্রত্যেক মানুষের, তা সে ছোটই হোক কি বড়ই হোক-তার কিছু না কিছু করার আছে। জাতির জন্য যদি কিছু অবদান রাখা যায় তাহলে তাতে দেশপ্রেমের নিদর্শন থাকে। কিন্তু উগ্র স্বদেশপ্রেম মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর। অন্ধ স্বদেশপ্রেম মানুষকে সংকীর্ণ করে জাতিতে জাতিতে বিরোধের সৃষ্টি করে এবং মানুষের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে। অন্যদিকে মানবিকতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হয়ে অনেক মহামানব বিশ্ববরেণ্য হয়েছে। তাদের স্বদেশ প্রেম বিশ্ব প্রেমে রূপান্তরিত হয়েছে।

স্বদেশপ্রেমের প্রভাব

স্বদেশপ্রেমের মহৎ চেতনায় মন ও মানসিকতা সার্থক রূপে বিকশিত হয়। তার মন থেকে সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা দূর হয়। স্বদেশপ্রেম জাতির জন্য কল্যাণ নিয়ে আসে এবং তার ফলে জনসেবার মনোভাব সৃষ্টি হয়। স্বদেশপ্রেম মানুষকে উদার করে, আত্মসুখ বিসর্জনের অনুপ্রেরণা দান করে ও পরের জন্য স্বার্থ ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। তাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা স্বদেশের ফলে জীবন উৎসর্গ করেছেন। স্বদেশ প্রেমের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে মহান ব্যক্তিরা নিজেদের উৎসর্গ করে গেছেন। স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছে তারা রেখে গেছেন স্বদেশ প্রেমের অবদান। যেমনটি কবি সাহিত্যিক লেখনীর মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ইত্যাদি অগণিত পেশায় নিবেদিত প্রাণ মানুষ মানুষের কল্যাণে তাদের কাজ করে গিয়েছেন। এবং তারা দেশের প্রতি ভালবাসার পরিচয় দিয়েছেন ও নিজেদেরও অমর করে নিয়েছেন স্বদেশ প্রেমের মাধ্যমে। তারা কেবল নিজেরাই এই কাজ করেনি, জাতিকেও এই কাজে অনুপ্রাণিত করে গিয়েছেন।

স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত

যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী স্বদেশের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নাম না জানা লক্ষ লক্ষ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য জীবন দিয়ে অমর হয়েছেন। বিশ্ব অনলাইনে দেশ প্রেমের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত রেখেছেন চীনের মাওসেতুং, রাশিয়ার লেলিন ও স্ট্যাইলিন, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন প্রমুখ ব্যক্তি। তাদের সবার নাম সারা বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে স্বদেশপ্রেমের জন্যই।

স্বদেশপ্রেম ও রাজনীতি

বস্তুত রাজনীতিদের প্রথম ও প্রধান শর্তই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেমের পবিত্র বেদিমূলেই রাজনীতির পাঠ। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদ দেশের সদাজাগ্রত প্রহরী। তবে বর্তমান রাজনৈতিক দল অথবা রাজনীতিবিদদের চেহারা ভিন্ন। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলে মহওর, বহওর কল্যাণবোধ থেকে ভ্রষ্ট। ব্যক্তিক ও দলীয় স্বার্থচিন্তায় অনেক ক্ষেত্রে প্রবল। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, মানুষের প্রয়োজনে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার সাধনা, স্বদেশপ্রেমের অঙ্গীকার ও সার্থকতা, এখনো প্রায় অনুপস্থিত।

বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও দেশপ্রেম

বর্তমানের এই আধুনিক সমাজে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা দিন দিন লোপ পাচ্ছে। বর্তমানে মানুষ দিন দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে এবং নিজের স্বার্থের দিকে বেশি ঝোঁকে পড়ছে। দেশ ও দেশের মানুষের কথা না ভেবে দেশের ক্ষতি করে নিজেদের উদরপূর্তি করছে। তারা দেশপ্রেমের চেতনাকে ভুলে গিয়ে নিজ স্বার্থকে বড় করে দেখছে। এই ধরনের মানসিকতার ফলে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে আর গরিবরা আরো দিন দিন গরীব হচ্ছে। সেজন্য এই ধরনের মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে দেশের ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।

উপসংহার

স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
কে বাঁচিতে চায়,
দাসত্বশৃংখল বল কে পরিবে পায়,
হে কে পরিবে পায়।

স্বদেশপ্রেম মানব জীবনে একটি শ্রেষ্ঠ গুণ ও অমূল্য সম্পদ। একটি মহৎ গুণ হিসেবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই স্বদেশপ্রেম থাকা উচিত। অর্থাৎ, স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কিছু না কিছু অবদান রাখা প্রত্যেকটি স্বদেশপ্রেমিক নাগরিকের একান্ত দায়িত্ব কর্তব্য। তাই আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। স্বার্থপরতা ত্যাগ করে দেশের কল্যাণে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে হবে। তবেই দেশ, সামাজিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রসর হতে সক্ষম হতে পারবে।

স্বদেশপ্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট, আপনার কাছে কেমন লেগেছে? কোথাও কি কোন বিষয় পরিবর্তন বা যোগ করা লাগবে? যদি কোথাও কোন বিষয় পরিবর্তন বা যোগ করা লাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন আমরা পরিবর্তন বা যোগ করার চেষ্টা করব। আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url