ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থানঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান - গুলো সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন? তাই ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান এখন আলোচনা করা হবে। ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে জানতে আপনাকে আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়তে হবে।

আপনি যদি ঢাকার বাসিন্দা অথবা ঢাকার বাহিরে বসবাস করেন, তাহলে আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলো। ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলো জেনে আপনার সপ্তাহিক ছুটির দিনে এ সমস্ত জায়গা গুলো বেড়াতে আসতে পারেন।

ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান: বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলা থেকেই প্রতিবছর অনেক মানুষ ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে আসে। ঢাকার বাহিরে যে সকল মানুষ বসবাস করে তারা অনেকেই জানেন না ঢাকার কোথায় কোথায় দর্শনেও স্থান রয়েছে। সেজন্য অনেকেই ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলি বিভিন্ন জায়গায় সার্চ করে থাকেন। তাই আপনিও যদি ঢাকায় অথবা ঢাকার আশেপাশের এলাকায় বসবাস করেন তাহলে আপনার অবশ্যই ঢাকার ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাই আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিতে আমরা ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা জেনে নেই ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলো।

বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত। বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর টি ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই জাতীয় জাদুঘর পরিবারসহ বেড়ানোর জন্য চমৎকার জায়গা। জাতীয় জাদুঘর-এর চারতলা ভবনের বিভিন্ন বিভাগে মোট ৪০টি গ্যালারি রয়েছে। প্রকৃতির ইতিহাস, বিশ্ব সভ্যতা, মানবজাতির বিবর্তন, দেশীয় সংস্কৃতির মূলধারা এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে। তাছাড়াও জাতীয় জাদুঘরে বিশাল সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন শিল্প-কর্ম, প্রাচীন মুদ্রা, বিখ্যাত মুসলিন কাপড়, হাতির দাঁত, এবং মুঘল আমলের যুদ্ধে ব্যবহৃত গোলাবারুদসহ বিভিন্ন অস্ত্র সমূহ। বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর বৃহস্পতিবার বাদে প্রায় সপ্তাহে ৬ দিনেই সকাল ১০ঃ৩০ থেকে ৫ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে।

সংসদ ভবন ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত। কংক্রিট এবং ইটের তৈরি সংসদ ভবনটির স্থপতি করেছিলেন মার্কিন স্থপতি লই আই কান। সংসদ ভবনটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সভা। সংসদ ভবন ঢাকার একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে। এমপি হোস্টেল এবং জরুরী কাজে ব্যবহৃত ভবন সমূহ কমপ্লেক্সের বহির্ভাগে অবস্থিত। মূল ভবন ঘিরে অবস্থিত কৃত্রিম হ্রদ, দুইটি বাগানের মাঝের শূন্যস্থান পূরণ করেছে। এটি ঢাকার অন্যতম একটি ভ্রমণ স্থান বলা যায়।

আহসান মঞ্জিল হল ঢাকার বহুল জনপ্রিয় দর্শনের স্থান। এই আহসান মঞ্জিল অবস্থিত ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। একসময় ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটিকে ঢাকা শহরের প্রথম ইট পাথরের স্থাপনা হিসেবে মনে করত। এই স্থাপনাটি মার্বেল পাথর দিয়ে নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে। আহসান মঞ্জিল এর প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে জলসাঘর, অতিথিদের থাকার কক্ষ, দরবার হল, বৈঠকখানা, নাচ ঘর এবং আরো অনেক কিছু বসবাসের কক্ষ। তাছাড়াও প্রাসাদের সামনে রয়েছে, একটি বড় সবুজ মাঠ, একটি বড় সিঁড়ি এবং মনোরম ফুলের বাগান। রাজধানী ঢাকায় পরিবারসহ অন্যতম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে এই আহসান মঞ্জিল। আহসান মঞ্জিল শনিবার থেকে বুধবার মোট সপ্তাহে ৫ দিন সকাল ১০ঃ৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। সাধারণ সব দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য প্রায় ২০ টাকা করে। আর ছোট বাচ্চাদের প্রবেশ মূল্য প্রায় ১০ টাকা করে।

পরিবারসহ ঢাকায় ঘুরে আসার অন্যতম আরেকটি জায়গা হচ্ছে মিরপুর চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানা ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। মিরপুর চিড়িয়াখানা প্রায় ৭৫ একর জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে। বাচ্চাদের বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে চিড়িয়াখানা। মিরপুর চিড়িয়াখানাটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তাছাড়াও ১৯১ প্রজাতির বেশি এবং ২১৫০ টি প্রজাতির বিদেশী প্রাণীও রয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, গন্ডার, জলহস্তি, বানর, ভাল্লুক, জেব্রা, কুমির ইত্যাদি সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও রয়েছে। মিরপুর চিড়িয়াখানা সাপ্তাহিক রবিবার বন্ধ থাকে এছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে। মিরপুর চিড়িয়াখানাটি সকাল ৯ঃ০০ থেকে বিকাল ৬ঃ০০ পর্যন্ত খোলা থাকে। মিরপুর চিড়িয়াখানায় প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি শুধুমাত্র ৫০ টাকা করে।

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হল ঢাকার বেড়ানোর আদর্শ দর্শনীয় স্থান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সাহেব এর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি এখন তার স্মৃতি জাদুকর হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে। এই বাড়িতেই বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। এই বাড়িটিতে রয়েছে তার সারা জীবনের বিভিন্ন দুর্লভ ছবি ও তার শেষ সময়ের অনেক ধরনের স্মৃতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং তার পরিবারের নানান স্মৃতি রয়েছে। ১৯৯৭ সালে এই বাড়িটিকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছিল। এই জাদুঘরটি খোলা থাকে বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০ঃ০০ থেকে বিকাল ৫ঃ০০ পর্যন্ত।

শ্যামপুর ইকো পার্ক ঢাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত শ্যামপুর ইকো পার্ক। এই পার্কটি বুড়িগঙ্গা নদীর অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালে নির্মাণ করেন। আপনি যদি ঢাকার মধ্যে পরিবার পরিজন সহ নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাহলে নিঃসন্দেহে আপনি শ্যামপুর ইকো পার্ক এ বেড়াতে আস্তে পারেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের রাইড রয়েছে। এখানে প্রায় চব্বিশটির মতো রাইড রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে বিশাল বাগান, নদীর তীরবর্তী নৌঘাট, 9D সিনেমা, ফুড কোর্টসহ আরো বিভিন্ন ধরনের সুব্যবস্থা। শ্যামপুর ইকো পার্ক এর প্রবেশ মূল্য জনপতি শুধু মাত্র ৩০ টাকা করে। তাছাড়াও রাইড উপভোগ করতে চাইলে রাইড ভেদে ৩০ টাকা থেকে ১০০ টাকা জনপ্রতি খরচ হবে। শ্যামপুর ইকো পার্ক নিয়মিত সকাল ৮ঃ০০ থেকে রাত ৮ঃ০০ পর্যন্ত খোলা থাকে।

ঢাকার মধ্য আপনি যদি বসবাস করেন, তাহলে ছুটির দিনে অথবা বিকেলের সময়ে বেরিয়ে আসতে পারেন ঢাকার আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিল থেকে। হাতিরঝিল ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ঢাকার এই বিনোদন কেন্দ্রটি। আপনি হাতির ঝিল-এর টলটলে সবুজ পানিতে ওয়াটার বাস ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন পুরো ঝিল। খোলা আকাশের নিচে মনোরম পরিবেশের হাতির ঝিলে সম্প্রতি যোগ হয়েছে রংবেরঙের আলোর সঙ্গে পানির ফোরোয়া। সেজন্য ছুটির দিনে অথবা বিকেলের দিকে এই দর্শনীয় স্থানটিতে আপনি ঘুরতে যেতে পারেন।

লালবাগ কেল্লা হল ঢাকার বহুল জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত মুঘল সাম্রাজ্যের এক অসমাপ্ত প্রাচীন দূর্গ যা এখন জাদুঘর ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। আপনি যদি পরিবারসহ কোথাও ঘুরতে চান তাহলে আপনি লালবাগ কেল্লায় বেড়াতে আসতে পারেন। লালবাগ কেল্লায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন ৩ গম্বুজ মসজিদ। এছাড়াও রয়েছে পরীবিবির চতুষ্কোন সমাধি। এই স্থাপনাটির ভেতরে রয়েছে সাদা মার্বেল পাথরের ফুল, পাতা ও বিভিন্ন নকশা করা কষ্টি পাথরের ট্যালি। লালবাগ কেল্লায় জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। পাঁচ বছরের নিচের বাচ্চাদের প্রবেশ মূল্য প্রয়োজন হয় না। বিদেশী পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা।

ঢাকার মধ্য ঘরে বেড়ানোর জন্য একটি ভালো দর্শনীয় স্থান হল চন্দ্রিমা উদ্যান। এটি ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সংসদ ভবনের পাশেই অবস্থিত। চন্দ্রিমা উদ্যানটি রয়েছে ক্রিসেন্ট লেকের পাশেই। ১৯৮১ সালের আগে চন্দ্রিমা উদ্যানটিতে গবাদি পশু এবং চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করা হতো। তবে পরবর্তীতে মরহুম জিয়াউর রহমানের সমাধি থাকায় এলাকাটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রায় ৭৪ একর জায়গা জুড়ে মরহুম জিয়াউর রহমানের সমাধি, ঝুলন্ত সেতু, মেমোরিয়াল হল এবং মসজিদ। চন্দ্রিমা উদ্যান এর মূল আকর্ষণ হল ক্রিসেন্ট লেক এবং ফোয়ারা। এই চন্দ্রিমা উদ্যানটি প্রায় সকলের জন্যই উন্মুক্ত।

আপনি চাইলে ছুটির দিনে একটু সবুজের মহারোহ অনুভব করতে চলে আসতে পারেন বাংলাদেশ জাতীয় উদ্যান অর্থাৎ বোটানিক্যাল গার্ডেন। বোটানিক্যাল গার্ডেন ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানার ঠিক পাশেই অবস্থিত। ২০৮ একর জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় বৃক্ষ উদ্যান। বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রায় ৮০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফল, ওষুধি গাছ-গাছালি সহ, পুকুর, দিঘী, ফুলের বাগান এবং সবুজ ঘাসে ভরা মাঠ। আপনি এখানে পরিবারসহ আসতে পারেন। বোটানিক্যাল গার্ডেন-এর সময়সূচী হল সকাল ৯ঃ০০ থেকে বিকাল ৫ঃ০০ পর্যন্ত।

ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, কারণ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে খুবই সুন্দর ভাবে আলোচনা করা রয়েছে, ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলো। তারপরও যদি আপনার কোথাও বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট সেকশনে জানাবেন আমরা আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার কাছে যদি এই আর্টিকেলটি তথ্যবহুল মনে হয় তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলো। এরকম নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের গুগল নিউজ এ ফোলো দিয়ে রাখুন। কারণ আমরা এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট বা আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আপনি জেনো ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান গুলো বেড়াতে পারেন এই কামনা করে আজকের আর্টিকেল এখানে শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম।