সুন্দরবন রচনা - সকল ক্লাস
সুন্দরবন অনুচ্ছেদসুন্দরবন রচনা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন? তাই আমরা এই আর্টিকেলে
সুন্দরবন রচনা আপনার সামনে তুলে ধরবো। সুন্দরবন রচনা সম্পর্কে জানার জন্য আপনাকে
আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়তে হবে। বিভিন্ন পরীক্ষাতে সুন্দরবন রচনা লিখতে হয়।
আপনারা যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাদের বিভিন্ন পরীক্ষাতেই সুন্দরবন রচনা পড়তে
বা লিখতে হয়। সেজন্য আপনাদের সুন্দরবন রচনা সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাহলে চলুন
জেনে নেওয়া যাক সুন্দর মন রচনা।
পোস্ট সূচীপত্রঃ সুন্দরবন রচনা - সকল ক্লাস
- ভূমিকা
- সুন্দরবনের আয়তন এবং অবস্থান
- সুন্দরবনের ভূতত্ত্ব, মৃতিকা এবং জলবায়ু
- সুন্দরবনের উদ্ভিদ
- সুন্দরবনের প্রাণী
- সুন্দরবনের অবস্থান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে
- সুন্দরবন জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে
- সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা
- উপসংহার
ভূমিকাঃ সুন্দরবন পৃথিবীর সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বন। সুন্দরবনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐশ্বর্যের অপূর্ব লীলাভূমি। সুন্দরবনে রয়েছে প্রচুর সুন্দরী বৃক্ষ থাকায় এই বোনের নামকরণ করা হয়েছিল সুন্দরবন। সুন্দরবনে বাস করে পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সেজন্য এই সুন্দরবন দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পরিচিতি ও ব্যাপক। এই সুন্দরবন জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।
সুন্দরবনের আয়তন এবং অবস্থানঃ সুন্দরবনের মোট আয়তন ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫০০ হেক্টর অথবা ৩৪ হাজার ৫০০ একর (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া) সুন্দরবন পৃথিবীর সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বন। বাংলাদেশের সুন্দরবনের প্রায় ৬২ ভাগ অথবা ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে। আর সুন্দরবনের বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে। সুন্দরবনের মোট ৩১.১ শতাংশ এলাকা জলাজীর্ণ। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, দক্ষিনে বিশাল বঙ্গোপসাগর, হরিণঘাট নদী, বরিশাল এবং পিরোজপুর জেলা, পশ্চিমে রায়মঙ্গল, হাড়িয়াভাঙ্গা নদী এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আংশিক প্রান্ত সীমানা জুড়ে সুন্দরবনের বিস্তার। অক্ষাংশের হিসাবে বাংলাদেশ এবং ভারত উপকূল ধরে বিস্তৃত ২১°৩০' - ২২°৩০' উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯°০০ - ৮৯°৫৫ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যবর্তী স্থানে সুন্দরবনের অবস্থান। বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু এবং গাছপালা দ্বারা সজ্জিত এই সুন্দরবন।
সুন্দরবনের ভূতত্ত্ব, মৃতিকা এবং জলবায়ুঃ এই সুন্দরবনের ভূভাগ
হিমালয় পর্বতের ভূমিক্ষয় জনিত জমা পলি থেকে সৃষ্টি। ভূ-বিজ্ঞানীরা সুন্দরবনের
ভূমির গঠন বিন্যাসে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সামান্য কিছু ঢালের সন্ধান পেয়েছেন। কূপ
খনন গবেষণা থেকে জানা যায়, সুন্দরবনের পশ্চিম এলাকা তুলনামূলকভাবে স্থির। কিন্তু
দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি অংশ ক্রমেই নিম্নমুখী। বাংলাদেশের অভ্যন্তরের তুলনায়
সুন্দরবনের ভূমি একটু আলাদা ধরনের। সুন্দরবনে জোয়ার ভাটার কারণে পানিতে জল
পদ্ধতা ও লবণাক্ততা বেশি। সুন্দরবনের ভূমি পলিযুক্ত দোঁআশ।
সুন্দরবনের উদ্ভিদঃ সুন্দরবনের উদ্ভিদকুল যেন বৈচিত্র্যময়। সুন্দরবনের অধিকাংশ গাছপালাই ম্যানগ্রোভ ধরনের। সুন্দরবনে রয়েছে বৃক্ষ, ঘাস, লতাগুল্ম, পরগাছা ইত্যাদি উদ্ভিদ। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ডি.প্রেইন উল্লেখ করেছেন, সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত সন্ধান প্রাপ্ত ৫০ টি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরবনই আছে ৩৫টি। সুন্দরবনে উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া, ধুন্দল, পশুর, বাইন প্রভৃতি। এছাড়াও সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই জন্মে গোলপাতা।
সুন্দরবনের প্রাণীঃ বনের অস্তিত্ব, প্রাণী ব্যতীত কল্পনাই করা যায় না। সুন্দরবনে বিচিত্র সব ধরনের প্রাণীর বসবাস। সুন্দরবনে রয়েছে ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং আট প্রজাতির উভচর প্রাণী। যখনই আমরা সুন্দরবনের কথা বলতে যাই সবার আগে বাঘের কথা মনে হয়। আর এ সকল বাঘের মধ্যে পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, যারা একমাত্র বসবাসস্থল সুন্দরবন। এছাড়া এই সুন্দরবনে এক সময় প্রচুর পরিমাণে চিতাবাঘ ছিল। সুন্দরবনে বাঘের পরেই হরিণের প্রভাব বেশি। বেশ কয়েক প্রজাতির হরিণ রয়েছে সুন্দরবনের। সেগুলো হলোঃ মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, বারোশিঙ্গা হরিণ এবং সাম্বার জাতের হরিণ। এই হরিণগুলো সুন্দরবনের ঘাস পাতা খেয়েই জীবন ধারণ করে। সুন্দরবন পাখির জন্যও বিখ্যাত যারা সব সময় সুন্দরবনের মধ্যে কেঁচড় মেছর আওয়াজ করে থাকে। সুন্দরবনের পাখি রয়েছে শালিক, ময়না, টিয়া, ঘুঘু, টুনটুনি, শকুন, ফিঙ্গে, বুনো কবুতর, মাছরাঙ্গা, বন্য মোর সহ আরো বিভিন্ন জাতের পাখি। সুন্দরবনের গাছে গাছে সবার চোখের নজর কারে মৌচাক। এই সকল মৌচাকগুলোতে অগণিত মৌমাছিরা মধু জমা পড়ে থাকে। মৌওয়ালারা এই মধু সংগ্রহ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। সারা পৃথিবীতেই সুন্দরবনের মধু বেশ জনপ্রিয়। উপরের উল্লেখিত প্রাণীগুলো ছাড়াও সুন্দরবনের আরো অসংখ্য প্রাণে রয়েছে যা সুন্দরবনকে করেছে সমৃদ্ধ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির কারণে সুন্দরবনের অনেক প্রাণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে কয়েক দশক পরে এই সুন্দরবনে প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে যাবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুন্দরবনের অবস্থানঃ সুন্দরবনের যে সকল প্রাপ্ত কাঠ
রয়েছে সে কাঠ জ্বালানি ও কাঠ কয়লা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ম্যানগ্রোভের ফল
গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোলপাতা শুকিয়ে ঘরের চাল এবং বেড়া তৈরিতে ব্যাপক
ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনে যে সকল শামুক ঝিনুক পাওয়া যায় সেগুলো খাবার চুনের একটি
ভালো উৎস। সুন্দরবনের মধুর উপর নির্ভর করে একশ্রেণীর মানুষ যারা মধুর সংগ্রহ করে
তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। সুন্দরবনের মধু এই দেশে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও
রপ্তানি হয়। সুন্দরবন থেকে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে তা স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন
স্থানে বিক্রি করেন। এদেশে সুন্দরবনের বনজ সম্পদকে কেন্দ্র করেই বেশ কয়েকটি
শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে যার মধ্যে খুলনা নিউজ প্রিন্ট এবং হার্ডবোর্ড মিলস
উল্লেখযোগ্য।
জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে সুন্দরবনঃ সুন্দরবনের নিকটবর্তী
এলাকায় অনেক গ্রাম রয়েছে। গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ। কিন্তু এই
গ্রামগুলোতে এমন মানুষও রয়েছে যারা সুন্দরবনের কাঠ কাটতে যায় অথবা মধু সংগ্রহ
করতে যায়। এ সকল মানুষেরা সুন্দরবনকে জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম করে
নিয়েছেন। সুন্দরবনের মধু অত্যন্ত বিখ্যাত, কারণ বিভিন্ন ফুলের মৌসুমে বিভিন্ন
মধু পাওয়া যায়। যারা সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করে তাদেরকে মৌমাল অথবা মৌয়ালী
বলা হয়ে থাকে। এরা সুন্দরবন থেকে মধুর সংগ্রহ করার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ
করে। সুন্দরবনে বাওয়ালিরাও কাঠ কাটে এবং সেই কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করার
মাধ্যমে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। সুন্দরবনে এরা ঘর বাঁধে না, এরা টোঙ্গে
থাকে। টোঙ্গ মানে হল একটি গাছের উপর তৈরি করা ঘর। সুন্দরবনকে অনেকেই এভাবে জীবিকা
নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে।
সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থাঃ সুন্দরবন বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার
মধ্যে পতিত হয়েছে। সুন্দরবনের বনজ সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মানুষ অহরহ প্রবেশ
করছে। সেজন্য সুন্দরবনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে
ঘোষণা করা হলেও আজ পর্যন্ত যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং পরিকল্পনার অভাবে এটা
খুব ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। সুন্দরবনের আয়তন আস্তে আস্তে ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
তাছাড়াও লবণাক্ততা বেড়ে গিয়ে ম্যানগ্রোভও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের
জোড়া শিকারীদের হামলায় বাঘ কমতে কমতে প্রায় ৪৫০-এ নেমে গেছে। সুন্দরবনের
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সাম্প্রতিক আইলার আঘাতেও। ইউনেস্কো কমিশন সারা পৃথিবীর ৫২২
তম বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে সুন্দরবনের তিনটি এলাকাকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
সুন্দরবনের মোট আয়তনের ২৩ শতাংশ এরূপ ঘোষিত এলাকা। সেজন্য আশা করা যাচ্ছে
সুন্দরবনের সংরক্ষণ আগের থেকে কিছুটা হলেও সফল হবে।
উপসংহারঃ সুন্দরবনের একটি বিরাট প্রভাব রয়েছে বাংলাদেশের জলবায়ুর উপর। সুন্দরবনের জীব
বৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে বিলীন হচ্ছে। সুন্দরবন থেকে প্রাণী জগৎ বিলুপ্ত হয়ে গেলে
প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। সুন্দরবনের প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য
সরকারের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত এবং আমাদের সবার সুন্দরবনের প্রতি
দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। দলগতভাবে নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে আমাদের সুন্দরবনকে
রক্ষা করতেই হবে।
সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url