কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় - শীতকালীন সবজির নামের তালিকা
কিভাবে স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়প্রিয় কৃষকগন, আপনি নিশ্চয় জানতে চাচ্ছেন, কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় ও শীতকালীন সবজির নামের তালিকা এবং বারোমাসি সবজি তালিকা সম্পর্কে। সেজন্যই মূলত আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাকে এখন জানানোর চেষ্টা করব কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় ও শীতকালীন সবজির নামের তালিকা এবং বারোমাসি সবজি তালিকা সম্পর্কে।
আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় এবং শীতকালীন সবজির নামের তালিকা এর বিষয়গুলো আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। এছাড়াও আপনি শাক সবজি বিষয়ক অজানা তথ্য বা বারোমাসি সবজি তালিকা এই সকল বিষয়গুলিও জানতে পারবেন। আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। আপনি যদি একটি কৃষক হয়ে থাকেন, তবে চলুন দেরি না করে কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় ও শীতকালীন সবজির নামের তালিকা এবং বারোমাসি সবজি তালিকা বিষয়ে আমরা অজানা তথ্যগুলো জেনে আসার চেষ্টা করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
আমাদের মত অনেকে আছেন যারা গুগলে খোঁজাখুঁজি করেন, বারোমাসি সবজি তালিকা সম্পর্কে, কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও অনেকেই এই তালিকা গুলো খুঁজে পায় না। তাই আপনি যদি বারোমাসি সবজি তালিকা কখনো খুঁজে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কেননা এই পোস্টটি আমরা সুন্দরভাবে সাজিয়েছি বারোমাসি সবজি তালিকা নিয়ে।
এছাড়াও আপনি যদি এই পোস্টটি সম্পূর্ণ স্টেপ বাই স্টেপ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে যে সকল বিষয়গুলো আপনি জানতে পারবেন সেগুলো হল, শাক সবজি বলতে কী বোঝায়, ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম, শীতকালীন সবজির নামের তালিকা, গ্রীষ্মকালীন সবজি তালিকা এবং কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়। তো চলুন কৃষক বন্ধু এ অজানা তথ্য গুলো আমরা স্টেপ বাই স্টেপ জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি।
শাক সবজি বলতে কী বোঝায়
যদিও এই পোস্টটিতে আসা আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বারোমাসি সবজি তালিকা সম্পর্কে জানার। তারপরও আমাদেরকে শাকসবজি বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে জানাও প্রয়োজন। শাকসবজি বলতে সাধারণভাবে কোন মানুষের খাদ্য উপযোগী উদ্ভিদ এবং তার অঙ্গসমূহকে শাকসবজি বা শুধুই শাক কিংবা সবজি বলা হয়। কেবল শাকসবজি খাওয়া মানুষদের শাকাহারি বা নিরামিষ ভোজী বলা হয়ে থাকে। মূলত বিভিন্ন ধরনের গাছের পাতা যেটি ভাজি করে খাওয়া হয় তাকেই শাক বলা হয়।
যেমন বলা যায় পুঁইশাক, লাল শাক, কলমুর শাক প্রভৃতি। সবজি শব্দটি মূলত কিছুটা নির্বাচনে এবং রন্ধনসম্পর্কীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহীর দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত খাদ্যশস্য, বাদাম এবং ফল হিসেবে উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য খাদ্য এবং ডালবীজ সবজি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো জীববিজ্ঞানে উদ্ভিজ্জ শব্দের মূল অর্থ হলো উদ্ভিদ জগত, এবং উদ্ভিজ্জ সম্বন্ধে হিসেবে গাছের সমস্ত ধরনের বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম
এ সময় আমাদের বিভিন্ন রকম রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, বর্ষাকাল গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে আমাদের স্বস্তি দিলেও। বর্ষাকালীন সময় নিয়মিত যেভাবে বৃষ্টি হয় তার মাধ্যমে কাদা ইত্যাদি দ্বারা রোগের জীবাণু বাহিত হয় আমাদের শরীরে। এছাড়াও আমরা সকলেই বর্ষাকালীন সময় সর্দি, কাশি, জ্বর এবং ডায়রিয়া ইত্যাদি এ সমস্ত রোগের কবলে পড়ে থাকি, কেননা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়।
এজন্যই বর্ষাকালে আমাদের প্রত্যেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সবজি, ফল এবং জল বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। তবে চলুন আমরা সকলেই জেনে নিই ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম সম্পর্কে। আমরা নিচে আপনাদের জন্য দশটি বর্ষাকালীন সবজির নাম জানানোর চেষ্টা করেছি। এ সকল সবজিগুলো খুব বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। এবং বর্ষাকালের সময় এই সবজিগুলোর দামও কিছুটা কম থাকে বাজারে।
১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম গুলো হল।
- মিষ্টি আলু
- কাকরোল
- করলা
- লাউ
- পটল
- বরবটি
- ঝিঙ্গা
- আদা রসুন
- মিষ্টি আলু
- করলা
অতিরিক্ত আকারে দেওয়া হল কিছু বর্ষাকালীন সবজির নাম।
- ঢেঁড়শ
- পুঁইশাক
- চাল কুমড়া
- পাট শাক
- শসা
অতিরিক্ত আকারে বর্ষাকালীন কিছু ফলের নাম দেওয়া হল।
- বেদেনা
- কালোজাম
- ন্যাস পাতি
- চেরি
- কলা
- পেয়ারা
- পেঁপে
শীতকালীন সবজির নামের তালিকা
শীতকালীন সবজির নামের তালিকা জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে, আমাদের এই বাংলাদেশ আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব অনুসারে ছয় ঋতুর দেশ। হেমন্ত, শীত, বর্ষা, শরৎ ও গ্রীষ্ম। বাংলাদেশের ঋতুতে অন্য ৫টি ঋতু তুলনায় শীতের প্রবাহ এবং বৈশিষ্ট্য আমাদের জীবনে একদম ভিন্নতর। ঘন কুয়াশায় চাদর মরিয়ে আগমন করে সকলেই এই শীতকাল। বাংলাদেশের শীতকালটা শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের আয়োজন দিয়ে।
বাঙালি জাতির সবথেকে জনপ্রিয় উৎসব, খেজুর গাছের রস, খেজুরের গুড় এবং বিভিন্ন ধরনের সমাহার। শীতকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যায়। এই সময় সব থেকে যে সকল সবজি পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পেঁয়াজ পাতা, ব্রোকলি, মুলা, মটরশুটি, গাজর ইত্যাদি এবং শাকসবজির মধ্যে রয়েছে পালং শাক, পুঁইশাক, পাট শাক ইত্যাদি শীতকালীন সময়ে বা শীতকালের মৌসুমে এসবের সাদ সব থেকে বেশি থাকে এমনকি পুষ্টিগুণে ভরপুর। যাইহোক আমরা এখন জেনে নিই শীতকালীন সবজির নামের তালিকাটি।
শীতকালীন সবজির নামের তালিকা।
এ সকল শীতকালীন মৌসুমী শাকসবজি কিংবা ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই আমাদের শরীরের চাহিদা মতাবেক পুষ্টি উপাদান, তাছাড়া বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব এ সকল সবজি বা ফল গ্রহণের মাধ্যমে। এছাড়াও বছরের যে কোন সময়ের তুলনায় শীতকালীন শাক সবজি ও ফলের স্বাদ এবং পুষ্টি সবথেকে বেশি।
প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের ত্বকের বার্ধক্য রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং আমাদের ত্বকের ফজিকতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া প্রায় সব ধরনের শাকসবজিতে প্রচুর মাত্রায় পানি থাকে, যেটি আমাদের দেহের পানির ঘাটতি পূরণে সক্ষম ভূমিকা রাখে।
বারোমাসি সবজি তালিকা
বারোমাসি সবজি তালিকা, সম্পর্কে যদি কথা বলি তাহলে প্রথমে মাথায় আসবে, আমাদের এই বাংলাদেশটি ছয় ঋতুর দেশ হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও ঋতু বৈচিত্রের জন্য এই বাংলাদেশের মাটিতে হলে বিভিন্ন রকম সবজি ও ফল। সেজন্যই মূলত আমাদের বাংলাদেশের কৃষির মৌসুম তিনটি, সেগুলো হলঃ খরিব ওয়ান, ফরিদ টু এবং রবি। যদিও কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে।
তবে আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু এবং আমাদের সকলের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেকটি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষিকাজ করতে হয়ে থাকে। সারা বাংলাদেশের সারা বছরই যে ধরনের সবজি সহজে উৎপাদিত হয় তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
বারোমাসি সবজি তালিকা এর মধ্যে রয়েছে।
এছাড়াও অপরিচিত বিশেষ কিছু শাকসবজি বিভিন্ন এলাকার বিশেষত হিসেবে উৎপাদিত হয়। উপরে আমরা যে সকল ফসল গুলোর কথা বললাম তার মধ্যে কিছু শুধু শাক এছাড়া বাকি গুলো স্বাদ এবং সবজি উভয় হিসেবে পরিচিত রয়েছে। কিন্তু সবজি ফসল উৎপাদন মোটেও অন্যান্য ফসলের মত নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য আপনাকে বিশেষ ধরনের যত্ন নিতে হবে।
তাছাড়া আপনি যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে চান, তাহলে অল্প পরিমাণ জায়গা ও অধিক পরিমাণ ফসল ফুলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সেজন্য আপনাকে সবজি আবাদের জন্য বাড়ির আঙিনায় অথবা অপেক্ষা কৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। এবং সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দেওয়ার পর জমির মাটি জো অবস্থায় জায়গা বেছে নিতে হবে, আপনি প্রত্যেকটি বেডের মাঝখানটায় ছয় থেকে আট ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করে নিন।
সুতরাং আপনাকে নালার মাটি তুললেই দুই পাশে বেড প্রয়োজন মত উঁচু করতে হবে। মূলত এভাবেই বেড তৈরীর একটি বিশেষত হচ্ছে আমরা আগেই আপনাকে বলার চেষ্টা করেছি, সবজি বা শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সেজন্যই বিশেষ প্রয়োজন হয়ে থাকে বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। সবজি বা শাক সবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা রয়েছে অন্যদিকে বর্ষাকালীন অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
তাই বেড তৈরি করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরি করে নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও রাখা হয়ে থাকে। তবে বেড ও নালা তৈরি না করলে সেটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয় না। সেটা মূলত হয়ে থাকে সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে করে ফলন খুব একটা ভালো হয় না। কাঁচকলা, পেঁপে এ ধরনের সবজি বসতবাড়ির আঙিনায়, এমনকি পুকুর পাড়ে বা রাস্তাঘাটে সহজেই আবাদ করা যায়।
পাট শাক, ডাটা, লাল শাক, শাক, গাজর, মুলা শাক এবং লাল গম ইত্যাদি সবজি তৈরিকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজগণে দিলেই অনেকটাই ভালো ফলন পাওয়া যায়।এছাড়াও ফুলকপি, টমেটো, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, বেগুন, কচু এবং ওল কচু ইত্যাদি সবজিগুলো এক মিটারের বেডে দুই শাড়ি পরে নির্ধারিত দূরত্বে চারাগুলো লাগিয়ে আবাদ করলে বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।
তাই তো এসব সবজিগুলো উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে না শাড়িতে যারা তৈরি করে নিতে হয়। আর অন্যদিকে শসা, কাঁকরোল, পটল, চিচিঙ্গা, লাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, করলা, বরবটি এবং শিম ইত্যাদি লতা জাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেদে দুইটি শাড়ি পড়ে সেখানে জঙ্গল দিয়ে দিতে হয়। মূলত বেডের দুই পাশে খুঁটি দিয়ে পড়ে তা ইংরেজি অক্ষর ভি আকৃতিতে বা এক্স আকৃতিতে বাকিয়ে বেঁধে দিতে হয়ে থাকে।
এমনকি বেড ছাড়াও লতা জাতীয় এ ধরনের সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে বা রাস্তার ধারে এমনকি পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবার করলে অনেকটাই ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু অন্যান্য যেকোনো ধরনের ফসলের তুলনায় এ ধরনের সবজি ফলনের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়ে থাকে। বিনা আবাদে এ ধরনের সবজি চাষ করা যেতে পারে। তাই বন্যা পরবর্তীতে পুনরাবাসনের সময় বিনা চাষেই এ সকল আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সম্পূর্ণ জৈবভাবে এ সকল সবজি ফলন উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও আমাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকিটা মেটাতে হবে বা বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। এরপর আন্তঃপরিচর্যা ও পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করে নেওয়া দরকার। তখনই এই সব উৎপাদিত ফসল গুলো সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সেজন্যই এভাবেই সারা বছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্পর্শ পরিসরে সবজি বা শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে এবং বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব। আমাদের সকলেরই শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ হিসেবে কাজ করে শাকসবজি। এছাড়াও প্রত্যেকটি ব্যক্তির ঘরে কমপক্ষে ২৫০ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া খুবই প্রয়োজন। এবং সেটি নিবিড় ভাবে ও নিরাপদ ভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়ায় সবচেয়ে ভালো। সেজন্য আমাদের সারা বছর অলসতা না করে সময়টাকে কাজে লাগিয়ে সবজির বাগান গড়ে তোলা প্রয়োজন।
গ্রীষ্মকালীন সবজি তালিকা
গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি তালিকার মধ্যে রয়েছে।
কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়
যেহেতু আমরা সকলেই উপরের অংশ থেকে জেনে এসেছি, বারোমাসি সবজি তালিকা সম্পর্কে। তবুও আমাদের এখন জানা প্রয়োজন কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়। তাই আমরা পোস্টটির এই অংশে এখন জানার চেষ্টা করব।
বৈশাখ মাসে কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
বৈশাখ মাস (মধ্যে এপ্রিল - মধ্য মে)
- ডাটা, পাটশাক, বেগুন, আদা, ঢেঁড়স, লাল শাক, গিমাকলমি বীর উত্তম সময়। এর সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপন করা যায়।
- করলা, ঝিঙ্গা, চাল কুমড়া, শসার মাচা তৈরি, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা ধুন্দুল, চারা উৎপাদন করতে হয়।
- খরিফ - ১ মৌসুমের সবজির বীজ বপন, ডাটা, লাল শাক, তারা রোপন করলে ভাল হয়।এছাড়াও এ সময় বরবটি ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
- খরিফ - ২ সবজি রেট ও চারা তৈরি করলে ভাল হয়, এছাড়াও কচি শজিনা, তরমুজ, এবং বাঙ্গি সংগ্রহ করতে হবে।
- আপনাকে ফল চাষের স্থান নির্বাচন করতে হবে এবং উন্নত জাতের ফলের চারা বা কোমল সংগ্রহ করতে হবে, এছাড়াও পুরনো ফল গাছে ফলন্ত গাছের শেষ প্রদান করতে হবে।
জৈষ্ঠ্য মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
- আপনাকে আগে বীজতলায় বপনকৃত খরিফ - ২ এর সবজির চারা রোপণ এবং সেচ ও সার প্রয়োগের পাশাপাশি পরিচর্যা করতে হবে।
- শজিনা সংগ্রহ করতে হবে এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপন ও পরিচর্যা করতে হবে।
- নাবিকুমড়া জাতীয় ফসলের মাচা তৈরি এবং সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে।
- ঝিঙ্গা, ধনু, টাকরোল, চিচিঙ্গা, পটল সংগ্রহ ও পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- ফলের চারা রোপনের গর্ত প্রস্তুত এবং বয়স্ক ফল গাছের সুসংসার প্রয়োগ করতে হবে এর পাশাপাশি ফলন্ত গাছের ফল সংগ্রহ এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আষাঢ় মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
- খরিফ - ২ সবজির চারা রোপন ও পরিচর্যা, সেচ, সার প্রয়োগ করতে হবে।
- গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টমেটো, কাঁচামরিচের পরিচর্যা, সিমের বীজ বপন কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় রোগ বালাই গুলো দমন করতে হবে।
- আপনার আগে লাগানো বেগুন, টমেটো ও ঢেরসের বাগান থেকে ফসল গুলো সংগ্রহ করতে হবে।
- ফলসহ ওষুধি গাছের চারা বা কমল রোপন, খুঁটি দিয়ে চারা বেঁধে দেওয়া, কাঁচা বা বেড়া দেওয়া এবং ফল গাছে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
শ্রাবণ মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
- খরিফ - ২ এর সবজি ওঠানো ও পোকামাকড় দমন করা প্রয়োজন।
- আগাম রবি সবজি যেমন বাধাকপি, লাউ, ফুলকপি, বেগুনের বীজতলা তৈরি, বীজ বপন শুরু করলে ভালো হয়।
- রোপনকৃত ফলের চারা পরিচর্যা, এবং উন্নত চারা বা কমল রোপন, এছাড়া খুবই দেওয়া এবং খাসিবা বেড়া দেওয়া, ফুলন্ত গাছের ফল সংগ্রহ করে নেওয়া প্রয়োজন।
- শিমের বীজ বপন, এবং লাল শাক ও পালং শাকের বীজ বপন করার সময় এটি।
ভাদ্র মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
ভাদ্র (মধ্য আগস্ট - মধ্য সেপ্টেম্বর)
- নাবি খরিফ ২ সবজি সংগ্রহ এবং বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।
- মধ্যম ও নাবী রবি সবজির বীজতলা তৈরি এবং বীজ বপন করা প্রয়োজন।
- আগাম রবি সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, টমেটো, বেগুন, কুমড়া, লাউয়ের জমি তৈরি চারারোপণ সার প্রয়োগ ইত্যাদি করা প্রয়োজন।
- আগে লাগানো ফলের উন্নত চারা বা কলম লাগাতে হবে এবং খুঁটি দেওয়া বেড়া দেওয়া চারা গাছগুলো সংরক্ষণ, এছাড়া ফল সংগ্রহের পর গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করা প্রয়োজন।
আশ্বিন মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানান
আসিম (মধ্য সেপ্টেম্বর - মধ্য অক্টোবর)
- ফল গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে, আগাছা পরিষ্কার এবং সার প্রয়োগ করতে হবে।
- শীম, বরবটি, লাউয়ের মাথা তৈরি ও পরিচর্যা করতে হবে।
- আগাম রবি সবজির চারা রোপন চারার, যত্ন সেচ সার প্রয়োগ, রোগ বালাই দমন সহ রবি সবজির বীজ তোলা তৈরি বীজ বপন আগাম টমেটো বাঁধাকপি ফুলকপি ওলকপির আগাছা ছেঁটে দিতে হবে।
- রসুন, পেঁয়াজের বীজ বপন আলো লাগানো প্রয়োজন।
কার্তিক মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
কার্তিক (মধ্য অক্টোবর - মধ্য নভেম্বর)
- নাবি রবি সবজির চারা উৎপাদন, এবং জমি তৈরি ও চারা লাগানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
- আলুর কেউল বাধা এবং আগাম রবি সবজি পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করতে হবে।
- মরিচের বীজ বপন এবং চারা রোপন করতে হবে।
- ফল গাছের পরিচর্যা এবং সার প্রয়োগ না করলে সার ব্যবহার ও মালচিং করে মাটিতে রস সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
- ফুলকপি, বাঁধাকপি, এবং ওল কপির গোঁড়া বাধা ও আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- মধ্যম রবি সবজি পরিচর্যা এবং সার প্রয়োগ ও সেচ প্রদান করা প্রয়োজন।
অগ্রাহায়ণ মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
অগ্রাহায়ণ (মধ্যম নভেম্বর - মধ্যম ডিসেম্বর)
- ফল গাছের মালচিং এবং পরিমিত সার প্রয়োগ করে নেওয়া প্রয়োজন।
- অন্যান্য যে ধরনের রবি ফসল যেমন টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, ওলকপি, শালগমের চারা যত্ন, সেচ প্রদান, ছাড় প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার এবং সবজি সংরক্ষণ করে নেওয়া প্রয়োজন।
- মিষ্টি আলোর লতা রোপন, এছাড়া পূর্বে রোকনকিত লতার পরিচর্যা, রসুন, পেঁয়াজ ও মরিচের চারা রোপন, এছাড়াও আলোর জমেতে সার প্রয়োগ ও সেচ প্রদান ইত্যাদি করা প্রয়োজন।
পৌষ মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
পৌষ (মধ্য ডিসেম্বর - মধ্য জানুয়ারি)
- যারা বাণিজ্যিকভাবে মৌসুমী ফলে চাষ করতে চাইছেন তাদের এই সময় ফুল গাছের বেশি করে যত্ন নিতে হবে বিশেষ করে সারের উপকারি প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
- নাবি রবি সবজির পরিচর্যা, ফুল গাছের রোগ প্রতিরোধ বা পোকামাকড় দমন সহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে।
- আগাম এবং মধ্যম রবি সবজির রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন এবং সবজি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
মাঘ মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
মাঘ (মধ্য জানুয়ারি - মধ্য ফেব্রুয়ারি)
- বীজ তলায় চারা উৎপাদনে বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন। কারণ সুস্থ সবল রোগ বিধি মুক্ত চারা রোপন করতে পারলে পরবর্তী সময়ে অনায়াসে ভালো ফলন বা ফসল পাওয়া সম্ভব।
- পেয়াজ, রসুন, আলুর গোড়ায় মাটিতে তুলে দেওয়া এবং সেচ, সার প্রয়োগ করা ও টমেটোর ডাল ফল ছাড়া, মধ্যম এবং নবী রবি সবজির সেচ সার, গৌরা বাধা, মাচা দেওয়া ও আগাম খরিফ ১ সবজির বীজ তলা তৈরির বা মাদা তৈরির বা বীজ বপন করা প্রয়োজন।
- ফল গাছের রোগবালায় পোকামাকড় দমন ও অন্যান্য পরিচর্যা করা প্রয়োজন।
ফাল্গুন মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
ফাল্গুন (মধ্য ফেব্রুয়ারি - মধ্য মার্চ)
- আগাম খরিফ ১ সবজির চারা উৎপাদন ও মূল জমি তৈরি এবং সার প্রয়োগ ও রোপন করা প্রয়োজন।
- নাবী খরিফ ১ সবজি গুলোর বীজ তলা তৈরি, বীজ বপন, মাদা তৈরি, ডাটা, ঢেঁড়স এবং লাল শাকের বীজ বপন করলে ভালো হয়।
- আলোর সংরক্ষণে বেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। কারণ এক্ষেত্রে জমিতে আলু গাছের বয়স ৮৫ দিন হলে মাটির সমান করে সমুদয় গাছ কেটে গর্তে আবর্জনা সার তৈরি করলে ভাল হয়।
- মিষ্টি আলু সংরক্ষণ, রবি সবজির বীজ সংরক্ষণ, এবং সংরক্ষণ ও বাগানের অন্যান্য ফলের পরিচর্যা করা প্রয়োজন।
- এভাবে মাটির নিচে দশ দিন আলো রাখার পরে, সুতরাং রোকনের ৯০ বাই ১০০ দিন পরে আলো তুলতে হবে। এতে করে চামড়া শক্ত হবে ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে।
- ফল গাছের গোড়ায় রস কম থাকলে মাঝে মধ্যে সেচ প্রদান করা প্রয়োজন, এছাড়াও রোগবালায় ও পোকামাকড় দমন করতে হবে।
চৈত্র মাসে আপনি কি কি সবজি চাষ করবেন তা জানুন
চৈত্র (মধ্য মার্চ - মধ্যে এপ্রিল)
- নাবী জাতের বীজ তলা তৈরি এবং বীজ বপন করা প্রয়োজন।
- নাবী রবি সবজি উঠানো এবং বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে।
- যে সকল সবজির চারা তৈরি হয়েছে সেগুলো মূল জমিতে রোপণ করা প্রয়োজন।
- গ্রীষ্মকালীন বেগুন, মরিচ, টমেটোর বীজবপন এছাড়া চারা রোপন করা প্রয়োজন।
- সবজি ক্ষেতের আগাছা দমন করতে হবে, এছাড়াও সেচ এবং সার প্রয়োগ করতে হবে, কুমড়া জাতীয় সবজির রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
- মাটিতে রসের ঘাটতি হলে ফলের গটি বা কড়া ঝরে যায়, সেজন্য এই সময় দরকার সেচ।এছাড়াও রোগবালায় পোকামাকড় দমন করা জরুরি।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠকগণ, আমরা এই প্রশ্নের মাধ্যমে এতক্ষণ ধরে যা যা জানলাম সেগুলো হল, শাক সবজি বলতে কী বোঝায়, ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম, শীতকালীন সবজির নামের তালিকা, বারোমাসি সবজি তালিকা, গ্রীষ্মকালীন সবজি তালিকা এবং কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়। যেহেতু কৃষকেরা আছে বলে আমরা সুন্দরভাবে যেকোনো সময় বাজারে যে কোন সবজি পায়, সেহেতু আমাদের সকলেরই উক্ত বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি এই পোষ্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এ পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এছাড়াও আপনি নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন, কেননা আমরা এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের অজানা তথ্য এবং নতুন নতুন ব্লগ পোস্ট বা আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকে। আসসালামু আলাইকুম।
সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url