জুমার দিনের ১১ টি আমল এবং জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল
ঘুরাঘুরি ক্যাপশন বাংলা ও ভ্রমণ নিয়ে স্ট্যাটাসআসসালামু আলাইকুম, আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য আমরা জুমার দিনের ১১ টি আমল সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই আপনি যদি জুমার দিনের ১১ টি আমল এবং জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল সম্পর্কে জানতে চান। তবে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কারণ এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, জুমার দিনের ১১ টি আমল এবং জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল। এছাড়াও এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জুমার দিনের আমল কি কি, জুমার দিনের আসরের পরের আমল এই বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। তবে চলুন দেরি না করে স্টেপ বাই স্টেপ জুমার দিনের ১১ টি আমল এবং জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল সম্পর্কে জেনে আসার চেষ্টা করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
জুমার দিন গোটা মুসলিম জাতির সপ্তাহিক ঈদের দিন। জুম্মার দিন মুসলিমের জন্য বিশেষ নেয়ামত। এই দিনটি অসংখ্য আমলে ভরপুর। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা এই দিনটি সম্পর্কে খুব একটা জানেন না। আমরা যারা মুসলমান আছি তাদের জন্য এই দিনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এই দিনটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কেননা আমরা এই পোস্টটি এমনভাবে সাজিয়েছি, যেন জুমার দিনের যে সকল আমল এবং ফজিলত গুলো আছে সেগুলো আপনারা জানতে পারেন।
এবং জানার পর সেভাবেই আমলগুলো করতে পারেন। আপনি এ পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে যেগুলো জানতে পারবেন সেগুলো হল- জুমার দিনের ঘটনা, জুম্মার দিনের আমল কি কি, জুমার দিনের ১১ টি আমল, জুমার দিনের আসরের পরের আমল এবং জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল। তাহলে চলুন এই আমলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
জুম্মার দিনের আমল কি কি
ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র জুম্মার দিন ও জুমাবারের রাত দিন অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জুম্মার দিনকে সপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়ে থাকে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মতোই জুম্মার দিনের সওয়াব। জুম্মার দিনে ইসলামী ইতিহাসে বড় বড় ও মহৎ কিছু ঘটনা রয়েছে। আল্লাহতালার কাছে জুমার গুরুত্ব এত বেশি যে, কুরআনে " জুমা" নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল করেন।
যদি তোমরা জানতে (সূরা জুমা- ৯)' আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখনই তোমরা আল্লাহর স্মরণে " মসজিদে" এগিয়ে যাও এবং কেনা-বেচা দুনিয়াদারি যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)' এই হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হল সাপ্তাহিক ঈদের দিন।
(মুসলিম শরীফ, হাদিস নম্বর ৮৫৪)' এই হাদিসের আসল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ঐদিন হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া ওই দিনেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
(বুখারী, হাদিস নম্বর ৬৪০০)' এই হাদীসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন, জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে, তাই কোন মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, এবং তখন যদি সে নামাজে থাকে, তবে তার যে কোন কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করবেন।
জুম্মার দিনের আমল
- (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১০৪৭)' এই হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দূর পাঠ করো, কারণ তোমাদের পাটকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। এছাড়াও কিছু আমল হলো:
- গোসল করা
- উত্তম পোশাক পরিধান করা
- সুগন্ধি ব্যবহার করা
- মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা
- কেনাবেচা বন্ধ রাখা
- দ্রুত মসজিদে যাওয়া
- সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা
- সূরা কাহফের শেষ ১০ আয়াত পাঠ করা
- বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
- দোয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দেওয়া
জুমার দিনের ১১ টি আমল
মহান আল্লাহ তা'আলা মুসলিম সমাজে জুমার দিনকে পৃথিবীর অন্যতম তাৎপর্যবহ দিবস হিসেবে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। এবং জুমা নামেও পবিত্র কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল হয়েছে।(সূরা জুমুয়াম, আয়াত ১০) এই সূরাতে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
সপ্তাহের দুই দিনই জুম্মার দিনের মতো মসজিদে আসা প্রত্যক্ষ মুসলমানের ঈমানের দাবি হওয়া উচিত।
সালাতুল জুমা। ইসলামের অন্যতম একটি নামাজ। "জুমু আহা" শব্দটি আরবি, এবং এর অর্থ হল একত্রিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া, সম্মিলিত হওয়া। যেহেতু, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মমিন মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাতের সাথে সেদিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজ রূপে আদায় করে। সেজন্যই মূলত এ নামাজকে "জুমার নামাজ" বলা হয়ে থাকে।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় যাওয়ার পর একবার মদিনার আনসার সাহাবীরা আলোচনায় বসেন। তারা বললেন, ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিন রয়েছে, যে দিনে তারা সবাই একত্রিত হয়। নাসারারাও সপ্তাহে একত্রিত হয় একদিন।সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সবাই সমবেদ হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব এবং নামাজ আদায় করব।
অতঃপর তারা আলোচনায় বললেন, শনিবার ইহুদিদের এবং রবিবার নাসারাদের জন্য নির্ধারিত।অবশেষে তারা ইয়াওমুল আরুবা শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন, (সিরাতুল মোস্তফা ও দূরসে তিরমিজি)। এই জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ১১ টি আমল গুলো নিচে দেওয়া হল।
জুমার দিনের ১১ টি আমল
- আগে আগে ঘুম থেকে ওঠা।
- গোসল করা।
- সুগন্ধি ব্যবহার করা।
- পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
- খুতবার সময় চুপ থেকে খুতবা সোনা।
- বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা।
- আগে আগে মসজিদে আসা।
- বেশি বেশি করে দোয়া করা, কারণ এই দিনে ওদের পড়ে মনের দোয়া কবুল হয়।
- কাতার ভেঙে সামনে না যাওয়া।
- সূরা কাহাফ তেলাওয়াত বা পাঠ করা।
- তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করা।
জুমার দিনের আসরের পরের আমল
ইসলামে একটি মর্যাদা পণ্য দিন হলো জুমাবার।
এই বিষয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, দিবস সমূহের মধ্যে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত (ইবনে মাজাহঃ ১০৮৪)"।
সুতরাং হাদিস অনুযায়ী জুমার দিনের আসর সময়টি মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় মুসলমানদের জন্য বিশেষ কিছু আমলের কথা বলা আছে হাদিস। আমল গুলোর মধ্যে রয়েছে জিকির, দোয়া, ইস্তেগফার ইত্যাদি। তাছাড়াও আরেকটি আমলের কথা বর্ণিত রয়েছে।সেটি হল বিশেষ নিয়মে দুরুদ পাঠ।
জুমার দিনের আসরের পরের আমল
(আফদালুস সালাওয়াতঃ ২৬)' আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুম্মার দিন আসর নামাজের পর ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।
(দুরুদটি হলোঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা।)
আসরের শেষ সময় দোয়া কবুল হয়
(আবু দাউদঃ ১০৪৮)' জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি এই সময়ে আল্লাহ কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো।
(জাদুল মাআদঃ ২/৩৯৪)' জেনে রাখা জরুরী যে, আসরের শেষ সময় বলতে সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, শুক্রবারে আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থে বর্ণিত আছে, জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়।
ইমাম আহমদ (রহঃ) ও আসরের পর বিশেষভাবে দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলেছেন। বিখ্যাত হাদিসের গ্রন্থ তিরজীবী শরীফের দ্বিতীয় খন্ডের ৩৬০ নং পৃষ্ঠায় তার সবিশেষ কথাটি উল্লেখ আছে।
জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল
সপ্তাহের সবথেকে শ্রেষ্ঠ এবং মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন হল জুমার দিন। এই দিনে মূলত নামাজী হল সর্বশ্রেষ্ঠ আমল, কেননা আল্লাহ তায়ালা এই দিনে নামাজের ব্যাপারে যেভাবে বলেছে-
যদি তোমরা উপলব্ধি করো (সূরা জুমাঃ আয়াত ৯) " হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহর স্মরনের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় বর্জন করো। এটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর"।
(মুসলিম)' হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া এ দিনে তাহাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে ও এ দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।
(আবু দাউদ)' রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পড়বে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, (যদি তার কাছে সুগন্ধী থাকে)। এরপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। এবং নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। এরপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তবে তার এই আমল পরবর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুম্মা পর্যন্ত সকল সাগিরা গুনাহর র জন্য কাফফারা হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠকগণ, আজকের এই আর্টিকেলে জুম্মার দিনের আমল কি কি, জুমার দিনের ১১ টি আমল, জুমার দিনের আসরের পরের আমল এবং জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু আমরা সকলেই জুমার দিনকে অনেক পছন্দ করি, সেহেতু আমাদের সকলেরই উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে রাখা উচিত।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আঁটিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারন আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরনের আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। দোয়া করি আপনি ভালো থাকবেন, আসসালামু আলাইকুম।
সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url