ঠান্ডা জ্বর হলে করণীয় কি - বাচ্চাদের জ্বর হলে করণীয় কি
পেটে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন, ঠান্ডা জ্বর হলে করণীয় কি এবং বাচ্চাদের জ্বর হলে করণীয় কি?। তাহলে বন্ধু আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন কারণ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে জানাতে চলেছি ঠান্ডা জ্বর হলে করণীয় কি এবং বাচ্চাদের জ্বর হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
আসলে জ্বর হঠাৎ করে হওয়ার অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই রয়েছে। অনেকের ঝড় দুই বা তিনদিন পরে ভালো হয়ে যায়, আবার অনেককে দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগতে হয়। জ্বরের কারণে হাসপাতালে ভর্তির অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকের। বাংলাদেশের সাধারণত জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে ঘরে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেছেন কোন কোন সময় জ্বর আপনার জন্য মারাত্মক প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
চিকিৎসকের মতে, জ্বরের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। আমাদের দেহে কিছু কিছু জ্বর আপনাআপনি সেরে যায়। আবার কিছু কিছু জরের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাই এ পোস্টে জ্বর নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হল। আমাদের দেশে সাধারণত জ্বর হলে প্যারাসিটামল এবং বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে ঘরেই চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাই চিকিৎসকেরা বলেছেন কোন কোন সময় জ্বর মারাত্মক প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
এবং চিকিৎসকরা আরো বলেন, জড়ের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। আমাদের দেহে কিছু কিছু জ্বর আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়, আবার কিছু কিছু জরের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় জ্বর কে সাধারণত ৩ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে যেমনঃ
১। রেমিটেন্ট
যখন আমাদের দেহে ২৪ ঘন্টায় জ্বরের মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২ ফেরেনহাইটের মধ্যে তারতম্য হয়ে থাকে, সেটাকে বলা হয় রেমিটেন্ট জ্বর।
২। ইন্টারমিটেন্ট
আমাদের শরীরে জ্বর দৈনিক কয়েক ঘণ্টা করে থাকে, এবং আসে যায়, তখন সেটাকে বলা হয় ইন্টারমিটেন্ট জ্বর।
৩। কন্টিনিউড
কোন ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হলে ২৪ ঘন্টায় যখন শরীরে তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বা ৩ ফারেনহাইট তারতম্য হয়, কিন্তু জ্বর পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় আসে না, সেটাকে বলা হয় কন্টিনিউড জ্বর। তাই আমরা জ্বর হলে কি করব এবং জ্বর হলে কি কি খাবার খাব বা কেমন ভাবে চলাফেরা করা উচিত সে সম্পর্কে আমাদের এই পোস্টটিতে সম্পন্ন একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। এবং বারবার জ্বর আসার কারণ কে তুলে ধরা হয়েছে তাই এ পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়লে। জ্বর সম্বন্ধে আপনি সঠিক ধারণা পাবেন।
ঠান্ডা জ্বর হলে করণীয় কি
আমাদের মধ্যে ঠান্ডা লাগার সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। যেমন নাক দিয়ে জল গড়ায়, কাশি হওয়া, কফ বের হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনারা কি করতে পারেন? আসুন তবে জেনে নেওয়া যাক। এই পদ্ধতিগুলি আপনি সুন্দরভাবে মানতে পারলে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং আপনিও ভালো থাকবেন। আমাদের আশেপাশে সারাক্ষণই জীবাণু ঘুরে বেড়ায়, বললে বিশ্বাস করবেন না।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় না হলে সহজে রোগ আমাদের দেহে চেপে বসতে পারে। সেক্ষেত্রে ইমিউনিটির দৌলতে আমরা এখনো বেঁচে রয়েছি। তবে ঠান্ডা লাগার ঘটনা কিন্তু এখন অহরহর ঘটে যাচ্ছে। অনেক মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। তবে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নাই। নানা ধরনের এডিন ও ভাইরাস ঝামেলা তৈরি করে থাকে। তাছাড়া ফ্লুয়ের পিছনে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকতে পারে, তবে আপনি চিন্তা করবেন না।
এমন কি আপনার ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন নেই। বরং ঘরোয়া উপায়ে ঠান্ডা লাগার চিকিৎসা আপনি নিজেই করতে পারবেন। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে বলা হয়েছে আপনি মধু খেতে পারেন। মধু এমন একটি উপাদান ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে দারুণ কাজ করে। এবং আরো বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সহজেই ফ্লুয়ের সমস্যা কমাতে পারে এই খাদ্য। এমনকি আপনি আদা খেতেও পারেন, কারণ এই সমস্যায় ধন্বন্তরি হল আদা।
এ খাদ্য শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে দারুন কাজ করে থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাই আমাদের দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে দারুণ কার্যকর হিসেবে কাজ করে এই খাবার। আপনি চাইলে আদায় করছি মুখে নিন বা আদা চা খেতে পারেন। আশা করছি আপনার সমস্যা কমে যাবে অনেক দ্রুত গতিতে।
জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত
আমাদের জ্বর হলে মুখে আর কোন কিছুই যেন রচে না বা ভালো লাগেনা। সে ক্ষেত্রে মনে হয় মধুকেও যেন চিরতার রস মনে হয়। এমনকি স্বাভাবিক সব খাবার বন্ধ করে তখন খেতে হয় পথ্য ধরনের খাবার। তাছাড়া মুখে না ঢুকলেও একপ্রকার জোর করেই আমাদের সেবন করতে হয়। তবে আমাদেরকে এমন কিছু খাওয়া উচিত যা শরীরে শক্তি যোগানোর পাশাপাশি জ্বর সারাতে অনেকটাই সহযোগিতা করবে। তবে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু খাবারের কথা।
যেমন আপেল, কমলা লেবু, আঙ্গুর, আনারস ইত্যাদি ফলে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ রয়েছে। তখন বেশি করে ফ্রুট সালাত খাওয়া উচিত। যেকোনো নরম খাবার যেমন সবজি এবং ডিম সিদ্ধ ইত্যাদি খাবার হজম হতে সুবিধা হয়। ভাত চটকে খাওয়া যাবে পছন্দ নয় তারা এই খাবারগুলি খেতে পারে। এগুলো অনেক পুষ্টিগুনে ভরপুর। আমি জ্বরের সময় মাঝে মধ্যে একটি দুটি করে কিসমিস খেতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিড্যান্ট।
তাছাড়া শরীরে এনার্জি সরবরাহ করে এই ট্রাই ফ্রুট। দিনে এক থেকে দুইবার কমলা লেবুর রস খেলে উপকার পেতে পারেন, সর্দি-কাশি প্রতিরোধ পরিচিত টোটকা তুলসী মধু। জ্বর হলে একটি দুটি পাতা চিবিয়ে খেলেও আপনি অনেক উপকার পাবেন। প্রোবায়োটিক হলো ভালো ব্যাকটেরিয়া যারা শরীরে বাসা বেধে অন্যান্য ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করে থাকে।
আপনি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনি যেকোনো প্রোবায়োটিক ড্রিংক খেতে পারেন। এছাড়াও ইয়োগার্ট বা বাটারমিল্কও প্রোবায়োটিক ফ্রুট ইত্যাদ। ওরেগানো একটি ভূমধ্যসাগরীয় হার্ব যা মূলত আর রান্নায় ব্যবহার করা হয়। ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি জ্বর ইত্যাদিতে খাওয়া যেতে পারে, এটা শরীরের পক্ষে খুবই ভালো কাজ করে।
গর্বাবস্থায় জ্বর হলে করণীয় কি
জ্বর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এক ধরনের প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে। সাধারণত কোন রোগ বা ইনফেকশন হলে তার লক্ষণ হিসেবে আমাদের দেহে জ্বর আসতে পারে। এমনকি গর্ভাবস্থায় জ্বর আসতে পারে। গর্ভাবস্থায় জ্বর আসা বা অতিরিক্ত তাপমাত্রা গর্ভের শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ সময়ে আপনাকে কখনোই ঘাবড়ানো যাবে না বরং জ্বর কমানোর ব্যবস্থা করা এবং দূরত্ব ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
কিভাবে বুঝবেন আপনার জ্বর এসেছে? গর্ভাবস্থায় জ্বর না আসলেও আপনার গা গরম হতে পারে। গর্ভকালীন হরমোন গুলোর প্রভাবে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে এমনটা হতে পারে। সে কারণে জ্বর এসেছে কিনা সেটা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই জ্বর এসেছে মনে হলে অথবা শরীর খারাপ লাগলে থার্মোমিটার দিয়ে জ্বরের তাপমাত্রা মেপে নেওয়া দরকার।
জ্বর আসার লক্ষণ
- শরীর কাঁপুনি হওয়া।
- হঠাৎ শীত শীত লাগতে পারা।
- শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- উজ্জ্বল বর্ণের হলে ত্বক লালচে ভাব দেখাতে পারে।
- স্বাভাবিকের চাইতেও বেশি ঘাম হওয়া।
- পা গরম লাগা।
- ঠান্ডা লাগার কিছুক্ষণ পর আবার গরম লাগার লক্ষণ দেখা দেওয়া।
এমনকি শরীরের কোথাও কোন ইনফেকশন হলে সে অনুযায়ী বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় জ্বর আসলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ দ্রুত নিন। যেহেতু শরীরে কোন রোগ বা ইনফেকশন বাসা বাধার কারণে জ্বর হতে পারে, তাই মূল কারণ খুঁজে বের করে সময় মতো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় দেখা দেয়, জ্বর নিজে নিজেই চলে গেছে। তারপরেও আপনার আপনার ডাক্তারের কাছে গিয়ে স্বাস্থ্য চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া উচিত। দেহে কোন জায়গায় ইনফেকশন থাকলে ডাক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক অথবা অ্যান্টিভাইরাস ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।
১০২ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয়
১০২° জ্বর হলে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। আপনি যদি জ্বরে আক্রান্ত হন তবে পরিশ্রম হয় এমন কোন কাজ করবেন না। কারণ এতে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে জ্বর আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনি প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার ও তরল জাতীয় পানীয় পান করুন। যেমন ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি ভিটামিনযুক্ত তরল পানীয় পান করুন।
জলপট্টি ব্যবহার করুন। এমনকি ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত গোসল করবেন না। তবে ভেজা তোয়ালো দিয়ে পুরো শরীর মুছে ফেলতে পারেন। বিশেষ করে কপাল ও ভারের পেছনের অংশ ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। আপনি যতটুক পারেন অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে ভিন্ন একটি পক্ষে বসবাস করুন। কারণ কিছু জোর আছে সংক্রামক। এই জ্বরটি আপনার হলে অন্যদেরকেও আক্রান্ত করতে পারে।
এবং জোর হলে অবশ্যই গ্রাভস এবং মাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে নিজে এবং অন্যরাও বিপদ থেকে বাঁচবে বা নিরাপদ থাকবে। আপনি নিজে নিজে কখনো ওষুধ কিনে খাবেন না। অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করবেন। ডিম, মাছ, মাংস সহ পুষ্টিকর খাবার সেবন করবেন। তাছাড়া ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলমূল খাবেন।
১০৩ ডিগ্রী জ্বর হলে করণীয়
১০৩ ডিগ্রী জ্বর হলে আইস ব্যাগ দিন মাথায়। এবং আরো বাড়লে শরীরে বরফ জলে ভেজা কাপড় জড়িয়ে জোরে বাতাস করুন। কাপড়টা গরম হয়ে গেলে আবার ভিজিয়ে নিন। বরফ জলে। এমন কি গোসলও করতে হবে।
১০৫ ডিগ্রী জ্বর হলে করণীয়
১০৫ ডিগ্রি জ্বর হলে অনেক কাশি, পেট ব্যথা, প্রসাবে জ্বালা, এমনকি বেশি বমি হলে, জ্বরের ঘরে অসংলগ্ন আচরণ করলে বা অচেতন এর মত হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া নিয়ে যাওয়া জরুরি। এক সপ্তাহের বেশি জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। কারণ চারিদিকে অনেকেই জোরে আক্রান্ত। কারো ফ্লু, কারো ডেঙ্গু, এমনকি চিকনগুনিয়া। আসলে জ্বর কিন্তু খারাপ নয়।
শরীরের যে কোন সংক্রমণ বা প্রদাহে বিপরীতে প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হল একমাত্র জ্বর।শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর গেলে জ্বর হয়েছে বলে ধরা যায়। আসলে জ্বর হলেই যে ডাক্তারের কাছে ঝরতে হবে বা ওষুধ খেয়ে জ্বর নামাতে হবে, ব্যাপারটি আসলে সেটা নয়। আমাদের দেহে বেশিরভাগ জ্বরই ভাইরাসজনিত। এতে কোন ওষুধ লাগে না।
এমনিতেই পাঁচ থেকে সাত দিন পর সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জহর নামাতে দেহের নিজ সভ্য কিছু কৌশল আছে। কাপুনি ও শীত শীত অনুভূতির মাধ্যমে জ্বর আসে। এরপর ঘাম দিয়ে ছেড়ে যায়। এ সময় আমাদের দেহে বাড়তি তাপমাত্রা হারায়। ১০৫ ডিগ্রি জ্বরে আপনি কাবু হয়ে গেলে বাড়িতে কিছু কৌশলের মাধ্যমে নামানোর চেষ্টা করতে পারেন।
এতে কাজ না হলে সাধারণত প্যারাসুটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যায়। তবে চিকিৎসককে না জানিয়ে কখনোই দোকান থেকে এন্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এসপেরিম বা আইবোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধও নয়।
জ্বর বেশি হলে করণীয় কি
আমাদের মধ্যে অনেকেই জ্বর বেশি হলে কেবল জলপট্টি দেন। তবে এর পাশাপাশি সারা গা মুছে দিলেও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে যখন বাচ্চাদের জ্বর হয় তখন তার বাবা-মা মাথায় পানি বা জলপট্টি দিতে থাকেন। আসলে জ্বর তো আর শুধু কপালেই থাকে না। ছাড়া শরীরেও থাকে। এজন্য আপনি যদি চিন্তা করেন আমাদের শরীরের একভাগ কেবল কপাল, এবং ৯৯ ভাগ কিন্তু অন্য অংশ।
সে ক্ষেত্রে আমাদের শরীরে যদি শুধু জল দেওয়া হয়, জ্বর কমার কোন সম্ভাবনা থাকে না।এজন্য আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে সমস্ত শরীরেই যেন মোছা হয়। তাছাড়া খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না। ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হালকা গরম পানি থাকলে ভালো হয়, যদি কোন একটি কাপড় ধুয়ে মুছে দেওয়া হয়।
এখানে কিছু পদ্ধতি আপনাকে অবলম্বন করতে হবে, এই পদ্ধতিগুলি যদি আপনি অনুসরণ করতে পারেন তাহলে খুব লাভ হবে। প্রথমে একটি হাত মুছেন, তারপর আরেকটি হাত, এরপর একটি পা ও তারপর আরেকটি হাতে এটি করতে পারেন তাহলে জ্বরের তাপমাত্রা কমে যাবে।গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই পদ্ধতিতে যদি কেউ স্পঞ্জিং পরে, সেটা প্যারাসুট আমল বা অন্যান্য যে ওষুধ দিয়ে থাকে, তার সমপরিমাণে কাজ করে।
তবে আমাদের মধ্যে ধৈর্য কম থাকে, তাই আগেই আমরা প্যারাসিটামল খাওয়া শুধু করে দিই। এছাড়াও একটি পর্যায়ে এসে জ্বর কিন্তু অনেক উপকারী। ধরেন আপনি ১০০ বা ১০০° ফারেনহাইট রাখেন। এতে কিন্তু অনেক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। তার ওপরে চলে গেলে কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য একটি সমস্যা। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের জ্বর হলে করণীয় কি
আমাদের অভিভাবকের জানা উচিত শিশু কোন অসুখে পড়লে শরীর রোগের বিরুদ্ধে জ্বর উপসর্গের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। সে কারণে অল্প মাত্রার জোয়ার সাধারণভাবে কোন ক্ষতি সাধন করে না, বরং উপকারী। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের অল্প মাত্রার জ্বর নিবারণে ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন থাকে না শিশুর জ্বর কমানোর প্রধান উদ্দেশ্য শিশুকে স্বস্তি দেওয়া।
তাছাড়া তাপমাত্রা সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক করে আনা প্রধান লক্ষ্য নয়। তবে শিশুর জ্বর সহনীয় মাত্রার মধ্যে আনা গেলে তার শিশুকে যেমন স্বস্তি দেয়, আবার মা বাবাকেও কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত করতে সহযোগিতা করে। আমাদের শিশুর জ্বর লাগলে যেসব ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়, তা প্রধানত কয়েক ধরনের হয়ে থাকে।
শিশুর ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ শিশুকে আলো বাতাস পূর্ণ ঘরে রাখার চেষ্টা করুন। ঘরে তাপমাত্রা ২০ থেকে ২২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখা ভালো। শিশুকে যথাসম্ভব কম কম কাপড়-চোপড় পড়াতে হবে। তাকে একপ্রস্থের কাপড় পরিধান করাতে হবে। এবং সে সঙ্গে শিশুর শরীর আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে পারলে তাপমাত্রা নেমে আসে।
শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি পূরণঃ শিশুর জ্বর হলে শরীরে জলীয় পদার্থের প্রয়োজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে জলের মাত্রা ৩৫.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি থাকলে প্রতি ডিগ্রি জ্বর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ৬ মিলে গ্রাম/ প্রতি কেজি হিসেবে পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। সে কারণে জ্বরের শিশুকে বেশি পরিমাণে পানি পান করানো ও তরল খাবার বারবার খাওয়ানো উচিত। প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ১১ শতাংশ হারে জলীয় পদার্থ শরীরে যোগানো উচিত।
শিশুকে ওষুধের সাহায্যে জ্বর নিবারণঃ শিশুর জ্বর হলে প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন প্রভৃতি ওষুধ নিরাপদের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। আগে শিশুর জ্বর আসলে অ্যাসপিরিন ওষুধ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ফ্লু ফ্লু জ্বরে এই ওষুধের প্রতিক্রিয়া হিসেবে শিশুর মারাত্মক অসুখ "রি-ই সিনড্রোম" হয়ে থাকে বলে শিশু বয়সের জ্বর এই ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে।
শিশুর স্পঞ্জিংঃ শিশুর অতিরিক্ত জ্বর কমিয়ে আনতে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর সুন্দর ভাবে মুছে দিতে হবে। জ্বরের তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের হলে, ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে এভাবে স্পঞ্জ করা হলে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে আসবে। তবে স্পঞ্জ পড়ানোর বিশ মিনিট আগে শিশুকে প্যারাসিটামল দেওয়া হলে তা জ্বর কমাতে অধিক কার্যকর বলে প্রমাণিত আছে।
ভাইরাস জ্বর হলে করণীয় কি
ভাইরাস জ্বর এই নামটি অনেকের কাছেই পরিচিত। এই জ্বর হঠাৎ করেই এবং খুব সহজে একজন থেকে অন্যজনে কাছে ছড়িয়ে যেতে পারে। একটি পরিবারের একজনের হলে বাকিদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। সারা শরীর কামড়ানোর ভাব দেখা দেয়। এমনকি বমি ও সে সঙ্গে সর্দি এবং হাজী থাকে। চোখ টকটকে লাল হয়ে যায়, এইসব উপসর্গ থাকলে মোটামুটি ধরে নেওয়া যেতে পারে রোগীর ভাইরাস ফিভার হয়েছে।
ভাইরাস ধরে শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে রোগীর সারা শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ভেজানো তোয়ালে চিপে, তা দিয়ে সুন্দরভাবে সারা শরীর মুছে দিতে হবে। এভাবে কয়েকবার করলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে আসবে। মাথায় পানি দেওয়া যেতে পারে। এবং গায়ে কোন বাড়তি কাঁথা দেওয়ার দরকার নেই। জ্বর না কমলে সামান্য কিছু খেয়ে নিয়ে একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বা সিরাপ দেওয়া যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই রুবিকে খাওয়ার পর খাওয়ানো উচিত।
রোগীকে এগুলোর একটি ট্যাবলেট দিনে তিনবার দেওয়া যেতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একই নামের সিরাপ এক চা চামচ করে দিনে তিনবার সেবন পড়াতে পারেন। তাছাড়া খুব বেশি বমি হলে এর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মটিলন বা এভোমিন একটি এবং বমি বন্ধ না হলে একটি করে দিনে তিনবার খাওয়ানো দরকার। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ পানিও ফল যেমনঃ আমলকি, কমলালেবু, আনারসি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাছাড়া রোগীকে দিনে দুই থেকে তিন কাপ কমলা লেবুর রস খাওয়াতে পারলে ভালো হয়। পরবর্তীতে ভিটামিন সি ট্যাবলেট একটা করে দিনে চার থেকে পাঁচবার খেতে পারেন। সব ধরনের স্বাভাবিকভাবে তখন খাওয়া যাবে। আশা করা যায় দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এই জ্বর এমনিতেই সেরে যাবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই পোষ্টটি যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই জ্বর বিষয়ক অনেক তথ্য জেনেছেন, এবং জ্বর কিভাবে ভালো করা যায় সে সমন্ধে আপনি অনেক কিছু জেনেছেন। তাই এ পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং এরকম বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন ব্লক পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আসসালামু আলাইকুম।
সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url