গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না - প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমাধান
শ্বাসকষ্ট হলে কি খাওয়া যাবে নাপ্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয় জানতে চাচ্ছেন গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবেনা
এবং প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমাধান বিষয়ে। তাই আমরা এই আর্টিকেলে
গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না এবং প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্টিকের সমাধান
সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে
পড়েন তাহলে গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না এবং প্রাকৃতিক উপায়ে
গ্যাস্ট্রিকের সমাধান সম্পর্কে ছাড়াও জানতে পারবেন চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার
উপায় সম্পর্কে।
আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে যে
সকল বিষয়গুলো জানতে পারবেন সেগুলো হলো কি করলে গ্যাস কমবে, গ্যাস্ট্রিক হলে কি
কি খাওয়া যাবেনা, গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ উপায় কি, প্রাকৃতিক উপায়ে
গ্যাস্ট্রিকের সমাধান, চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় এবং শিশুর গ্যাস দ্রুত
দূর করার উপায়। তবে চলুন দেরি না করে গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ উপায় কি এবং কি
করলে গ্যাস কমবে এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে আমরা স্টেপ বাই স্টেপ বিস্তারিতভাবে
জেনে আসার চেষ্টা করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না
ভূমিকা | গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না | প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমাধান
বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যার গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা
নেই, এবং এর যন্ত্রণা ওখানে অস্বস্তিকর সেটি একমাত্র ভক্তগভীরাই বোঝেন। সামান্য
একটু ভাজাপোড়া কিংবা দাওয়াত পার্টিতে মসলা ধৈর্য খাবার খেলে শুরু হয়ে যায়
গ্যাস্ট্রিকের অস্বস্তিকর সমস্যা। সেজন্যই মূলত অনেক মানুষ হাত বাড়ান বিভিন্ন
ওষুধের দিকে। আপনি যদি খোঁজ নিয়ে দেখেন,
তাহলে দেখবেন সারা বাংলাদেশে যে পরিমাণ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয়ে থাকে অন্য
সব ধরনের রোগ নিলেও এত পরিমাণ ওষুধ বিক্রি হয় না। সেজন্য আপনি শুধুমাত্র ওষুধের
ওপর নির্ভরশীল না হয়ে খাবারের দিকে মনোযোগী হতে পারেন। কারণ কিছু নিয়ম মেনে
চললেই গ্যাস্ট্রিক আপনার ধারের কাছেও আসবেনা। তাই আমরা আপনাকে গ্যাস্ট্রিক দূর
করার সহজ উপায় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানানো চেষ্টা করব।
এছাড়াও এ পোস্টটির মাধ্যমে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে
পারবেন, কি করলে গ্যাস কমবে তা সম্পর্কে জানতে পারবে তাছাড়া শিশুর গ্যাস দ্রুত
দূর করার উপায় জানতে পারবেন। তবে চলুন দেরি না করে এগুলো বিষয় সম্পর্কে আমরা
বিস্তারিতভাবে জেনে নি- আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।
কি করলে গ্যাস কমবে
কি করলে গ্যাস কমবে? এটা জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে কিসের জন্য আমাদের গ্যাস
হয়। মূলত আমাদের অনিয়মিত জীবনযাপন এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে আস্তে আস্তে
আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। সুতরাং সেই কারণে অনেক সময় গ্যাসের
সমস্যায় ভুগবেন অনেকেই। শুধুমাত্র তাই নয় বদহজম, এসিডিটি, পেটের ব্যথা এবং
অম্বলের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের পেট শুধুমাত্র গ্যাসের কারণেই সব সময় খুলে থাকে।
সেজন্য পেটে ভুড়ি না থাকলেও পেট দেখতে অনেক বড় মনে হয়। তাই আপনারও যদি গ্যাসের
সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে এই চারটি জিনিস অবিলম্বে
আপনার নিয়মিত ডায়েটে রাখার চেষ্টা করুন।
আপনার ডায়েটে যে চারটি জিনিস রাখবেন সেগুলো হল
- ডাবের জল
- কলা
- দই
- রসুন
আপনি যদি ডাবের জল খান তবে আপনার গ্যাসের সমস্যা অনেক তাড়াতাড়ি দূর হবে।কেননা
ডাবের জলে এন্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। এছাড়াও উপকারী মিনারেলস রয়েছে ডাবের
পানিতে।
কলা
আপনি যদি প্রতিদিন একটা দুইটা করে কলা খান তবে আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর হবে বা
কমবে।কারণ কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই আপনি অবশ্যই অন্তত একটি
করে কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
দই
দই আমাদের খাবারগুলোকে হজম করতে বেশ সাহায্য করে থাকে। তাই আপনি যদি নিয়মিত
দই খান তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। সে জন্য আপনি দুপুরের খাবারের পর
একটুখানি টক দই খেতে পারেন। কিন্তু চিনির বদলে একটু নুন দিয়ে খেতে পারেন।
রসুন
আপনি যদি নিয়মিত সকালে খালি পেটে এক পোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন তাহলে আপনার
গ্যাস কমবে তাড়াতাড়ি। সে ক্ষেত্রে আপনি দুপুরে ভাতের সঙ্গেও এক পোয়া রসুন
বেটে খেতে পারেন।এটি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন খেলে ভালো হয় যদি তাও না পারেন
তাহলে দুই থেকে তিন দিন খান।কেননা এটি আমাদের পরিপাক যন্ত্রের জন্য বেশ
উপকারী।
এছাড়াও আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেগুলো হল
- নিয়মিত আপনি শারীরিক চর্চা করার চেষ্টা করুন। কেননা পেটে গ্যাস জমার প্রবণতা অনেকটাই কমানো সম্ভব আপনার শারীরিক চর্চার মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার পেটের পেশির ব্যায়াম করলেও উপকার পাবেন অনেক।
- অতিরিক্ত মসলাদার খাবার আপনার গ্যাসের মূল কারণ। তাই সকল খাবার থেকে যতটুক সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন। আপনার যদি কোন কারণবশত বাইরে খান সেক্ষেত্রে আপনি ঝোল কারি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
- অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন খাওয়ার মাধ্যমেও আপনার গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তাই আপনি কখনোই আপনার প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত দুধ, মাছ, মাংস না খাওয়াই ভালো হবে।
গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না
আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন সব সময়। সেজন্য
তাদের বেশি তেল মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত পরিমাণে প্রাণিজ প্রোটিন এবং বেশি বেশি
করে জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সে সঙ্গে সঠিক মাপে জল খাওয়ার তো
আছেই। কিন্তু আপনি কি জানেন কয়েকটি খাবার আছে যেগুলো মাধ্যমে যাদের
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের খুব বেশি না খাওয়াই ভালো।
এছাড়াও কখনো যদি আপনি বুঝেন যে আপনার হজমের সমস্যা রয়েছে অনেক, তাহলে এই
খাবারগুলো না খাওয়াই ভালো আপনার জন্য। কেননা এই খাবারগুলোর মাধ্যমে আপনার
গ্যাস্ট্রিকের বিশেষণ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না সেগুলো হল
- কাঁচা ছোলা
- কচু
- রাজমা চাউল
- আঁচোড়
- মুলা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে
থাকেন।কেননা ছোলার প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু আপনি কি
জানেন ছোলা আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
কেননা যাদের হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তারা যদি খুব
বেশি ছোলা খায়। তাদের ভয়ানক ভাবে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।একই সঙ্গে
যাদের কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তারাও মূলত এই কাঁচা ছোলা খাওয়া থেকে
এড়িয়ে চলুন।
কচু
অনেকেই কচুর তরকারি খেতে খুবই পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু আপনি কি জানেন এই
কচুতেও আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য যাদের
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের কচু খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলাই
ভালো। কেননা এতে করেও পেটের সমস্যার পাশাপাশি কষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দেখা
দিতে পারে।
আঁচোড়
গরমের সময় আঁচোড় আনা হয় প্রায় সবার বাড়িতেই। খেতে অনেক
সুস্বাদু হওয়ার কারণে একে গাছ ফাঁকা নামেও ডাকা হয়। কিন্তু সুস্বাদু ও
পুষ্টিকর এই সবজিটি গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য বিশাল ভাবে ভয়ানক।
রাজমা চাউল
রাজমা চাউল বা রাজমা দিয়ে পরোটা এবং রুটি আজকাল বেশিরভাগ বাঙালির বাড়িতেই রাধা
হয়ে থাকে। পাঞ্জাবি এই খাবারটি খেতে যেমন অনেক সুস্বাদু কেমনই অনেক
পুষ্টিকর।এতেও আপনি প্রোটিনের মাত্রাগুলো ছোলার মতোই পাবেন। কিন্তু যদি আপনি
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ডুবে থাকেন, তবে এটি আপনার এড়িয়ে চলাই ভালো।
মুলা
গরমের সময় পাওয়া না গেলেও, শীতের সময় খুব সহজেই পাওয়া যায়। কিন্তু
এই মুলা গ্যাস্টিকের রোগীদের জন্য খুবই ভয়ানক। কেননা এটি গ্যাস্টিকের
সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এবং পেট ফুলে যাওয়া, পেট
ব্যথা সহ একাধিক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে মুলা।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ উপায় কি
এসিডিটি বা গ্যাস্টিকের সমস্যা নাই এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন কারণে
আমাদের এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ
উপায় কি এই সম্পর্কে আমরা এখন আপনাকে কিছু খাবারের দিকে মনোযোগী হতে বলব। কেননা
আপনি যদি এই খাবারগুলোতে মনোযোগী হন তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর তো হবেই, এবং
এর পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক আপনার ধারের কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক গ্যাস্ট্রিক দূর করার কিছু খাবার
পেঁপে
কারণ পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পাপায়া নামের এনজাইম যা হজম শক্তি বৃদ্ধি
করে থাকে।সেজন্য আপনি যদি নিয়মিত পেঁপে খান বা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে
আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেক দ্রুত ভালো করা সম্ভব।
শসা
শসা আমাদের পেট ঠান্ডা রাখতে অনেক সাহায্য করে থাকে। কেননা এতে রয়েছে
ফ্লেভানয়েড এবং এন্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান যার মাধ্যমে আমাদের পেটে গ্যাসের উদ্রেক
কমিয়ে থাকে।
কমলা ও কলা
কমলা ও কলা আমাদের পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে অনেকটাই ভূমিকা পালন করে
থাকে। তারপরে আমাদের পেটের গ্যাসের সমস্যা থেকে অনেক সহজেই মুক্তি
পাওয়া যায়। তাছাড়া কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যার ফলে আমাদের
কষ্টকাঠিন্যের দূর করতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি সারা দিনে অন্তত
একটি থেকে দুইটি কলা খেতে পারেন তাহলে আপনার পেট সব সময় পরিষ্কার থাকবে।
দই
দই আমাদের শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ সাহায্য করে থাকে। এতে করে
পেটের দ্রুত খাবার গুলো হজম হয়। তারপরে আমাদের পেটের গ্যাস হওয়ার প্রবণতা
অনেকটাই কমে আসে।
ডাবের পানি
ডাবের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সব খাবার সহজেই হজম হয়ে
যায়।এছাড়াও নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়
খুব সহজে। তাই আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের অনেক সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি
চেষ্টা করুন নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়ার। তাহলে অবশ্যই আপনার গ্যাস্টিকের
সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
আদা
সব চাইতে কার্যকরী অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার হল আদা। আপনার
যদি পেটে গ্যাস্টিকের সমস্যা বা পেট সব সময় খোলা ভাব থাকে তবে আপনি আদা কুচি করে
লবণ দিয়ে খান। তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা বা পেট খোলা ভাব
থেকে মুক্তি পাবেন।
রসুন
আপনি যদি আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে চান তাহলে রসুন ছাড়া কোন বিকল্প
নেই।আপনি যদি এক কোয়া করে রসুন খেতে পারেন তাহলে স্টমাকে অ্যাসিড
রক্ষণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তার ফলে আপনার গ্যাস সংক্রান্ত
বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ আস্তে আস্তে কমে যেতে শুরু করে।
এলোভেরা
এলোভেরা রয়েছে নানাবিধ খনিজ একদিকে যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।তেমনি ভাবেই
হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও বেশ ভূমিকা পালন করে। শুধুমাত্র তাই
নয়, অ্যালোভেরার উপাদান গুলো পেটে তৈরি হওয়া এসিডিটির কার্যকারিতা কমিয়ে
আনতে সাহায্য করে। তার ফলে এসিডিটির সমস্যা একেবারেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
লবঙ্গ
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, লবঙ্গে যে সকল উপাদান রয়েছে সে সকল
উপাদান হলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে গ্যাসের প্রকোপ কমতে সময় লাগে
না। তাই এখন থেকে বেশি মাত্রায় খাবার খাওয়ার পর বুক জ্বালাপোড়া ও ঢেকস
উঠলে দুই একটি লবঙ্গ খেয়ে ফেলতে ভুলবেন না যেন।
পুদিনা পাতার পানি
আপনি যদি একটা পানিতে ৫টি পুদিনা পাতা ফুটিয়ে খেতে পারে। তাহলে আপনার
পেট ফাঁপা এবং বমি ভাব দূরে রাখতে অনেক সাহায্য করবে এটি।
প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমাধান
গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে আমাদের সবার কাছেই সবচেয়ে পরিচিত একটি
সমস্যা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবারের সামান্য কিছু অনিয়ম করলেই অনেকের
মুখোমুখি হতে হয় এই সমস্যার। আর এটি আস্তে আস্তে একটা সময় বড় আকার ধারণ করে
সৃষ্টি করতে পারে আলসার। আমাদের শরীরে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন প্রবেশ করে, খাওয়ার
সময় বা তরল কোন কিছু পান করার সময়।
এছাড়াও আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্রে খাদ্য হজম হওয়ার সময় হাইড্রোজেন, কার্বন
ডাই-অক্সাইড বা মিথেনের মত গ্যাস নির্গত হয়ে কেটে জমা হয়ে থাকে। মূলত এ সকল
কারণে সৃষ্টি হয় গ্যাস্ট্রিকের। আবার কিছু শাকসবজি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত ও আজ
যুক্ত খাবার খেলেও আমাদের শরীরের পাকস্থলী হজম করতে পারে না অনেক সময়।
সেজন্যও আমাদের পেটে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আপনি এই সমস্যা থেকে
মুক্তি নিজে নিজেই পড়তে পারবেন প্রাকৃতিক উপায়ে। তাই আমরা নিচে কিছু প্রাকৃতিক
উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানের উপায় উল্লেখ করলাম।
আপনাদের জন্য রইল কিছু গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধানের প্রাকৃতিক সমাধান
দারুচিনি
দারুচিনি হলো গ্যাসের সমস্যা কমাতে অনেক কার্যকর। এছাড়াও এটি আপনার পেটের
ব্যথা কমাতেও অনেক ভালো কাজ করবে। প্রথমে আপনাকে দারুচিনি পানিতে ফুটিয়ে
নিতে হবে তারপর সেই পানি কুসুম গরম অবস্থায় খেতে হবে। তাছাড়াও আপনি দুধে
বা চায় দারুচিনির গুড়া মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতে করেও পাবেন আপনি অনেক
উপকার।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপনি যদি আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর করতে চান তাহলে আপেল সিডার ভিনেগার খেতে
পারেন, কারণ এটি অনেক কার্যকারী। সেজন্য আপনাকে প্রথমে পানি বা চায়ের
সাথে এক টেবিল চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশাতে হবে, তারপর সেটি ফান করতে
হবে, তাহলেই পাবেন অনেক উপকার। আর আপনি যদি খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফল
পেতে চান তাহলে আপনাকে দিনে তিনবার এটি পান করতে হবে।
লেবু
লেবু চা বা লেবু পানি পান করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়, গ্যাস্ট্রিকের
সমস্যা সমাধান করতে।তাই আপনি ভালো ফল পেতে চাইলে এর সাথে সামান্য পরিমাণ লবণ ও
জিরার গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
পানি
আপনি যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে সমাধান পেতে চান তাহলে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে
পানি পান করতে হবে। আপনি যদি নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করেন তাহলে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমানোর পাশাপাশি আরো অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।সেজন্য
অবশ্যই আপনি নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
আদা
অনেক ভালো প্রাকৃতিক উপাদান হচ্ছে আদা, পেটের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার
সমাধানের জন্য। সে ক্ষেত্রে আপনি আদা দিয়ে ফোটানো পানি বা চায়ে আদা খেতে
পারেন। কিন্তু আপনি যদি ভাল ফল পেতে চান তাহলে আদার সাথে লেবুর রস বা মধু
মিশাতে পারেন। এতে করে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি বদ হজম
দূর করতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
আমরা সকলেই জানি নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকে।কিন্তু আপনি কি জানেন
আপনার নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে গ্যাস্টিকের সমস্যার সমাধানে অনেক
কার্যকারী। তাই আপনি খাওয়ার পরে অবশ্যই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন সে
ক্ষেত্রে আপনার গ্যাস্টিকের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। তাছাড়াও দৌড় বা
দড়ি লাফ এবং হাটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতেও অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন
করে থাকে।
পুদিনা পাতা
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানে অনেক কার্যকারী হল পুদিনা পাতা। এছাড়াও এর
পাশাপাশি এটি আপনার বমি ভাব দূর করতে বেশ সাহায্য করে থাকে। তাই কিছু
পরিমাণে পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে ভালো করে চিবালেই কমানো সম্ভব হবে আপনার
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।
চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
এখন দেখা যায় ছোট বড় সকলেরই গ্যাস্টিকের সমস্যাই ভুগতে। মূলত গ্যাস্ট্রিকের
জন্য দায়ী কয়লা তো ভারি খাবার। আর এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার
জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট এর উপর ভরসা করে থাকে। এতে করে আমাদের লিভারের
সমস্যা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
স্কলার জার্নাল অব অ্যাপ্লাইড মেডিকেল স্টাডিজের এক প্রতিবেদন অনুসরণ থেকে জানা
যায়, ভারতে প্রায় তিন জনের মধ্যে একজন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন।
গ্যাস্ট্রিকের কারণে শুধু বমি নয় এর পাশাপাশি বুক জ্বালাপোড়া, বিষন্নতা,
মাথাব্যথা, বুক ব্যথা এবং অস্বস্তিভাব ইত্যাদি হয়। তাই আমরা এখন জানবো ঘরোয়া
উপায়ে কিভাবে চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করা যায়।
চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
- আলসারের সমস্যায় বাঁধাকপির ঝুড়ি মেলা বড় দায়। কারণ হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ইউ। তাই আপনি যদি নিয়মিত বাধাকপি খান তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই এতে থাকা ভিটামিন ইউ এর প্রভাবে পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এটি আপনি জুস হিসাবে প্রতিদিন পান করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি চান, স্বাদ বাড়াতে তবে বাঁধাকপির সাথে গাজরও মিশাতে পারেন।
- একটি ভারতীয় চিকিৎসক রুপালী দও বলেছেন, আপনি যদি গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে কাঁচা পেঁপে খান। তাই আপনি পেঁপের জুস বানিয়ে বা হালি করে কেটে সামান্য লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশেই দূর করতে সাহায্য করে ডাবের পানি। কারণ ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং এর পাশাপাশি এসিডিটি কমিয়ে থাকে। তাছাড়াও পেটব্যথা ও বুক জ্বালাপোড়া কমাতে অত্যন্ত কার্যকারী ডাবের পানি।
- আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা প্রতিনিয়ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন, হাতের কাছে সব সময় বেকিং সোডা রাখার চেষ্টা করুন। কারণ এটি এন্টাসিডের ন্যায় কাজ করে। এবং বেকিং সোডা পেটে জমে থাকা এসিডের পরিমাণ মুহূর্তেই দূর করে। এজন্য আপনাকে এক চা চামচ বেকিং সোডা পানির সাথে ভালো করে মিশিয়ে পান করতে হবে।
- আদায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ। এগুলি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে অনেক সাহায্য করে। সেজন্য গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যখন অনেক, তখন আদায় রাখুন ভরসা। সেক্ষেত্রে আপনি কিছুটা আদা চিবিয়ে রস খেতে পারেন। এছাড়াও আধা পানিতে ৫ মিনিট ফুটিয়ে চায়ের মত পান করুন। নিমিষেই আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
শিশুর গ্যাস দ্রুত দূর করার উপায়
আসলে গ্যাসের সমস্যা শুধু বড়দেরই হয় না, শিশুদেরও হয়। তারাও অনেক কষ্ট পায়
গ্যাসের কারণে। যখন দেখবেন শিশুর পেট ভরা আছে তবুও শিশুরা কান্নাকাটি করছে। তখন
বুঝবে তারা গ্যাসে কষ্ট পাচ্ছে। নবজাতক শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করে থাকে। এছাড়াও
মায়ের খাওয়া দেওয়ার কারণে শিশুদের পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে। কিছু কিছু
ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার কারণে ও বা ঠিকঠাক করে দুধ না খেলেও এই
গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তখন আসলে মায়েরা কি করেন? শুধু ওষুধ খাইয়ে শিশুদের গ্যাস কম করার চেষ্টা
করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন একটি সহজ উপায় আছে শিশুদের গ্যাস দূর করার।
এক্ষেত্রে শিশুকে মালিশ করে পেট থেকে গ্যাস বের করা যাবে। তবে একটা কথা অবশ্যই
সব সময় মনে রাখবেন, সেটা হল মালিশ করার জন্য ভালো তেল ব্যবহার করতে হবে, কেননা
শিশুদের ত্বক থাকে খুবই সেনসিটিভ।
- প্রথমে খুবই আলতো হাতে বৃওাকারে শিশুদের পেট মালিশ করতে থাকুন। এরপর নাভির কাছে ডান থেকে বাঁ দিকে বৃত্তাকের মালিশ করতে থাকুন। কখনোই শিশুর পেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না।
- গ্যাসের কারণে শিশু পেটে ব্যথা হলে শিশুর পেটে নিজের আঙ্গুল দিয়ে বাঁ দিক থেকে ডান দিকে ম্যাসাজ করতে থাকুন। এরপর নাভির ওপরে আঙ্গুলের মাধ্যমে মনওয়াকের মত করে ম্যাসাজ করতে পারেন। কিন্তু সব সময় খেয়াল রাখবেন, আপনার নখ যেন মালিশ করার আগে কাটা থাকে। যাতে করে শিশুর কোন ধরনের ব্যথা না লাগে।
- আপনার শিশুর যদি গ্যাসের সমস্যা হয় তাহলে তাকে উপড় করে হাঁটুর উপরে ছোঁয়াতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে তার পিঠে মালিশ করতে হবে। এভাবে কিছুক্ষণ মালিশ করলে শিশুর গ্যাসের সমস্যা দ্রুত দূর করা সম্ভব হবে।
- শিশু যত বেশি কান্না করবে, একটি শিশু যত বেশি কান্না করবে তার কান্নার সাথে বাতাস পেটে ঢুকবে। তাই এ বাতাসও কিন্তু পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করাতে পারে। সেজন্য অবশ্যই শিশুর কান্নার আগেই তাকে খেতে দিন বা তার সঙ্গে খেলা করুন।
শেষ কথা | গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না | প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমাধান
প্রিয় পাঠকগণ, আজকের এই আর্টিকেলে কি করলে গ্যাস কমবে, গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি
খাওয়া যাবে না, গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ উপায় কি, প্রাকৃতিক উপায়ে
গ্যাস্ট্রিকের সমাধান, চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় এবং শিশুর গ্যাস
দ্রুত দূর করার উপায় কি?। এই বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু
আমরা সবাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পড়ি, সেহেতু আমাদের সকলেরই উক্ত বিষয়গুলো
সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত
এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি এই পোস্টটি
আপনার অনেক উপকারে আসবে। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আঁটিকেল পেতে
নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারন আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে এই
ধরনের আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। দোয়া করি আপনি ভালো থাকবেন, আসসালামু
আলাইকুম।
সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url