দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় - হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয়

প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয় জানতে চেয়েছেন দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়? এবং হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয়? সম্পর্কে। তাই আমরা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে, দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় ও হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় কি।
দ্রুত-হাই-প্রেসার-কমানোর-উপায়
তাই আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অবশ্যই আপনি এগুলো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং এগুলো ছাড়া আরো অনেক বিষয় আমরা তুলে ধরেছি এই পোস্টের মধ্যে। তবে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে আসা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় - হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয়

ভূমিকা

আমাদের শরীরে এখন বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বেধে থাকে। তাছাড়া অসংখ্য মানুষ নানা অসুখে ভুগছেন। এবং আমাদের দেহে সব ধরনের রোগের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই আমাদের প্রত্যেককে এই রোগ নিয়ে সচেতন থাকতে হবে বা সতর্ক থাকা প্রয়োজন বিশেষভাবে। তাই আমরা এই পোস্টটি জুড়ে আপনাদের সামনে হঠাৎ হাই প্রেসার কমানোর উপায়, প্রেসের হাই হলে কি খেতে হবে, দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় এবং হঠাৎ হাই প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় কি।

এগুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি এগুলো সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এ পোস্টে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তবে চলুন দেরি না করে বিস্তারিতভাবে সব বিষয়ে গুলো ভালোভাবে জেনে আসি।

হঠাৎ হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়

বিভিন্ন কারণে আপনার হাই প্রেসার হতে পারে যেমন আপনার শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপের কারণে, আপনার পরিবারের যদি হাই প্রেসারের আক্রান্তর ইতিহাস থেকে থাকে, আপনার দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যা হলে, আপনি যদি ধূমপান বা মধ্যপান করে থাকেন তাহলে হতে পারে, কোন রকম পরিশ্রম না করলে, আপনার অতিরিক্ত ওজনের কারণে, এবং লবণ বেশি পরিমাণে খেলে।

সেজন্য আমাদের হাই প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমাদের কিছু জিনিস অত্যন্ত পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এবং শরীরে রক্ত চাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আপনার অন্যান্য রোগ থেকে দূরে থাকা সহজ হয়ে ওঠে। তবে চলুন আমরা জেনে আসি হাই প্রেসার কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় যেমনঃ

আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

আমাদের হাই প্রেসারের অন্যতম কারণ হলো ওজন বৃদ্ধি। তাছাড়া আমাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট হাই প্রেসারের লক্ষণ হিসেবে কাজ করে। তাই আপনাদেরকে সবসময় চেষ্টা রাখতে হবে যেন আপনার কোমরের পরিমাণ ৪০ ইঞ্চি কম হয়। এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩২ থেকে ৩৫ ইঞ্চির কম হলে ভালো হয়। সেজন্য আপনাকে স্বাস্থ্য কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর সব উপায় মেনে চলা জরুরি।

যতটুকু সম্ভব মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন

আমাদের শরীরে মানসিক চাপের কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। এটি শরীরে পেশীগুলোকে আস্তে আস্তে চাপের মুখে ফেলে দেয়।সেজন্য আমাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই যতটুকু সম্ভব আমাদেরকে সব সময় চেষ্টা করতে হবে মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার। আপনি যে কোন সমস্যার মুখোমুখি করলে মাথা ঠান্ডা রেখে সুন্দরভাবে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। হয়তোবা সেক্ষেত্রে পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হবে না মানসিক চাপ। কিন্তু আপনি যদি শান্ত পরিবেশ করতে পারেন তাহলে আপনার হাই প্রেসার কমানো অনেক সহজ হবে।

আপনাকে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে

কেননা আমাদের অনেকেরই অভ্যাস খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার। কিন্তু আপনারা জানেন অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে রক্ত চাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই খাবারের সঠিক মাত্রায় লবণ ব্যবহার করলে আপনার হাই প্রেসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। এমনটাই দাবি করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

আপনাকে প্রতিনিয়ত বা নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে

আপনি যদি নিয়মিত শরীরচর্চা ও পরিশ্রম করতে পারেন তাহলে রক্তচাপ হয়। সে ক্ষেত্রে হৃদয় যন্ত্র সুস্থ থাকে এবং আপনার ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে। তার জন্য আপনাকে প্রতিদিন অন্তত দুইবার ৫ থেকে ১০ মিনিট করে যে কোন ধরনের হালকা ব্যয়াম করা উচিত মেডিটেশন বা ইয়োগা এবং হাটাহাটি করার পরামর্শ দেন অনেক চিকিৎসকেরা।

আপনার খাবারে আনতে হবে পরিবর্তন

আপনার খাবারের তালিকায় যদি অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে থাকে তাহলে সেটি বর্জন করার চেষ্টা করুন। তাছাড়া অতিরিক্ত কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আপনার হাই প্রেসার বাড়তে পারে। সেজন্য খাবারের তালিকায় আপনাকে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। তাছাড়া আপনি যদি পারেন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা তৈরি করতে।

ধূমপান ও মদ্যপান থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন

কারণ এই দুটি অভ্যাসের জন্য কয়েক মিনিটের জন্য অস্বাভাবিক রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।তাই এক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও আপনার অতিরিক্ত মধ্যপানের কারণে রক্তচাপ সহ আরো অনেক সমস্যা দেহে বাসা বাঁধতে পারে। তাই আপনি যতটা সম্ভব এগুলো থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে

যেসব খাবারগুলো খাওয়া আপনার প্রয়োজন প্রেসার হাই হলে

নিচে আমরা বেশ কিছু খাবারের নাম বলেছি যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।তাহলে চলুন আমরা জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কে।

গাজর খেতে পারেন

কেননা গাজরে রয়েছে ক্লোরোজেনিক, ক্যাফেইক, পি কেউমারিক এসিডের মতো ফ্যানরিক যোগ্য কিছু উপাদান। সেজন্য রক্ত না লেগে রিলাক্স করে তুলতে অনেক সহায়তা করে থাকে এই উপাদানটি। এবং আপনার শরীর থেকে কমিয়ে থাকে প্রদাহ।সেক্ষেত্রে হাই প্রেসার থেকে মুক্ত করতে পারে।

পাতিলেবু খেতে পারেন

কারণ পাতিলেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি সেজন্য আমাদের হৃদয় যন্ত্রের সুরক্ষন নল এর শক্তি বাড়িয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আমাদের হাই প্রেসার থেকে মুক্ত করতে পারে।

তরমুজ

তরমুজে রয়েছে আরজিনাইন পদার্থ। তাই এটি একটি অ্যামিনো এসিড যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ধনেপাতা

কারণ ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বায়োঅ্যাকটিভ। যা আমাদের হতাশা কমানোর জন্য কাজ করে থাকে। তাই আপনি যদি নিয়মিত ধনেপাতা খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীর থেকে কমে যাবে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের সমস্যা।

তরমুজ

তরমুজ এ প্রচুর পরিমাণে আরজিনাইন রয়েছে। যা একটি অ্যামিনো এসিড সেজন্য আমাদের শরীর থেকে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে পারে খুব সহজে।

ডাবের পানি

ডাবের পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের নিউট্রিয়েন্ট। এই উপাদানগুলি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে।

রসুন

আমাদের ধমনী ও শিরায় জমে থাকা কোলেস্টেরল গুলোকে গলিয়ে দিতে অনেক সাহায্য করে থাকে এই রসুন। এবং এটি রক্তের প্রবাহ বাড়ানো ও ব্লাড প্রেসার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কলা

কারণ একটি গলায় রয়েছে ৪৭৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, যা আমাদের হাই ব্লাড প্রেসার কমিয়ে দিতে পারে। তাই আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত একটি দুটি করে কলা খেতে পারেন তাহলে আপনার ব্লাড প্রেসারের সমস্যা অনেকটাই ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়

দ্রুত আপনার হাই প্রেসার কমানোর জন্য এই ৫ উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

  1. আপনার খাবারের তালিকায় লবনের পরিমাণ কম করুন। এবং খাবারে কখনোই অতিরিক্ত লবণ যোগ করার চেষ্টা করবেন না। যতটুকু সম্ভব কম লবণযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  2. আপনাকে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ ও পরীক্ষা করা জরুরী যখন থেকে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
  3. সব সময় আপনাকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করুন। কেননা আপনার নিয়মিত ওয়ার্কআউট আপনার শরীরের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে এবং হৃদয় যন্ত্রকে সুস্থ রাখতে পারে। প্রতিদিন আপনাকে অন্তত ৩০ মিনিট করে শরীর চর্চার জন্য রাখতে হবে।
  4. সব সময় সুস্থ থাকার জন্য আপনাকে আপনার শরীরের ওজন কমাতে হবে। কারণ এটি সুস্থ থাকার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করে। সে ক্ষেত্রে আপনি ব্যায়াম করুন নিয়মিত, স্বাভাবিকভাবে রক্তচাপ বজায় রাখতে। সে ক্ষেত্রে আপনার ওজন ও কলেস্টেটলের মাত্রা বজায় থাকবে।
  5. আপনি যতটুকু পারেন তয় লাগতো ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।কেননা আপনার চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি ধূমপান এবং চর্বিযুক্ত খাবার যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

হঠাৎ হাই প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয়

আপনার জীবন যাপনের চলার পথে এবং খাদ্যাভ্যাসে। তাছাড়া এমন কি জীবন যাপনের ধরণেও পরিবর্তন আনা জরুরি। কারণ আপনার ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে, এবং খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে, অর্থাৎ আপনার বেশি লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটিকে ত্যাগ করতে হবে।

আপনাকে যথাক্রমে নিয়মিত পরিশ্রম করার চেষ্টা করতে হবে বাদ দিনে অন্তত ২০ মিনিট ধরে হাঁটাহাঁটি করা উচিত। সপ্তাহে অন্তত ৫ থেকে ৬ দিন এভাবে হাঁটাচলা করা উচিত আপনার জন্য। তাছাড়া আপনার ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সেটা যত তাড়াতাড়ি পারেন বাদ দেয়ার চেষ্টা করুন।

এবং আপনার যদি কোন ধরনের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে থাকে তাহলে সেটাকে যত দ্রুত পারেন বাদ দেন। শুধু যে এই অভ্যাসগুলো হাই পেশার রোগীদের বিষয়টি সেটা না যারা এখনো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হননে তাদের জন্যও। আমাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা সত্ত্বেও তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এলে ওষুধ সেবন করতে হতে পারে।

এবং তা অবশ্যই চিকিৎসকের চিকিৎসা মাফিক ওষুধ সেবন করতে হবে বা পরামর্শ নিতে হবে। এবং ওষুধগুলো প্রতিদিনই নিয়ম অনুসারে সময়মতো সেবন করতে হবে। ওষুধ সেবন করতে যেন আপনার কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। তাই আপনাকে ঔষুধগুলো এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেন তা সব সময় আপনার চোখে পড়ে।

সে ক্ষেত্রে আপনি যদি তাও কোন একদিন বা কোন সময় ভুলে যান। তাহলে যখনই সেটির কথা মনে পড়বে তখনই সে ওষুধ গুলো খেয়ে ফেলতে হবে। এবং আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, আপনি তাহলে প্রতি বছর ছয় মাস অন্তর অন্তর বা চিকিৎসকের চিকিৎসা অনুযায়ী রক্তচাপ পরিমাপ করা জরুরী।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছেন দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় ও হঠাৎ পেশার বেড়ে গেলে করণীয় কি। আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। এই পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং বিভিন্ন ধরনের নিয়মিত নতুন নতুন ব্লক পোস্ট বা আর্টিকেল পেটে আমাদের সাথেই থাকুন। আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url