যক্ষা রোগের লক্ষণ - যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
বেগুন খেলে কি হয়প্রিয় পাঠক, নিশ্চয়ই আপনি যক্ষা রোগের লক্ষণ? এবং যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়? সে সম্পর্কে জানতে এসেছেন। সেজন্য আমরা এই পুরো পোষ্টের মধ্যে আপনাদের জানিয়েছি যক্ষা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে এবং যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তার মাধ্যম।
তাই আপনি যদি এই পোস্টটি ভালোভাবে সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এবং যক্ষা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তবে চলুন শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ যক্ষা রোগের লক্ষণ - যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
ভূমিকা
নিচে কিছু যক্ষা রোগের লক্ষণ উল্লেখ করা হল।
- মাঝেমধ্যে বুকে ব্যথা করা
- রাতে ঘুমানোর সময় ঘাম বের হওয়া
- ক্ষুধা মন্দা
- কাশির সঙ্গে হালকা কিংবা ঘন রক্তপাত
- যক্ষ্মার অন্যতম লক্ষণ হল কাশি হওয়া
- এমনকি যক্ষা রোগের প্রসাবের সঙ্গেও রক্ত বের হওয়া
- শরীরের ওজন কমে যাওয়া
- মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন হওয়া
- সন্ধ্যা বাড়াতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা
- বুকে এবং পেটে পানি জমে থাকা
- অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি
যক্ষা রোগের কারণ গুলো কি কি
যক্ষা হল একটি প্রাচীন রোগ। একসময় এ রোগটি বেশ আতঙ্কের বিষয় ছিল। যক্ষা রোগের কারণগুলো হলো- সাধারণত সন্ধ্যাবেলায় জ্বর আসে, কফ হবে, নিয়ম মতন খাবার খাওয়ার ফলেও শুকিয়ে যাবে, কফ হওয়ার পর আর সারবে না। সাধারণ এন্টিবায়োটিক খেলেও সেটি সারবে না। এবং একটা সময় গিয়ে দেখা যাবে কফের সঙ্গে রক্ত বের হয়ে আসছে।
আরো পড়ুনঃ অতি তাড়াতাড়ি মোটা হওয়ার উপায়
আবার অনেক ক্ষেত্রে রক্ত নাও আসতে পারে। ওজন কমে যাওয়ার ভাব দেখা দিবে, ক্ষুধামন্দা হবে। এমনকি মেজাজ খিটখিটা হয়ে যাবে। সাধারণত এটা ফুসফুসের যক্ষা হয়ে থাকে। তাছাড়া অন্য কোন যক্ষার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো থাকতে নাও পারে। তাই আমাদের বিশেষভাবে এগুলোর দিকে নজরদারি দেওয়া উচিত।
যক্ষা রোগের কারণ গুলো কি কি?
- কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠা
- ক্লান্তি ভাব অনুভব করা
- ওজন কমে যাওয়া
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- জ্বর হওয়া
- শরীরে ঠান্ডা লাগা
- রাতে ঘাম হওয়া
- এবং আপনার পরিবারের টিবির রোগী থাকলে
- কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠা
- গুরুতর বাঁশি- তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়। ইত্যাদি।
যক্ষার লক্ষণ কিভাবে শুরু হয়
যক্ষা নামক মারাত্মক রোগটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। যক্ষাকে ক্ষয়রোগও বলা হয়ে থাকে। বিশ্ব যক্ষা দিবস ২৪শে মার্চ। বিশ্বব্যাপী একটি জটিল সংক্রামক ব্যাধি হল যক্ষা। এক সময় আমাদের সবার মধ্যে ধারণা ছিল " হয় যদি যক্ষা তবে মিলবে না রক্ষা"। কিন্তু এখন এই ধারণাটির কোন প্রকার ভিত্তি নেই। কারণ তখনকার সময় যক্ষা রোগ জীবাণু সম্পর্কে চিকিৎসকদের কোন ধারনাই ছিল না।
তার ফলে এই ভেজিটি প্রতিকারের কোন পন্থা পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমান যক্ষার যুগ জীবাণু আবিষ্কারের সাথে সাথে এটি নিরাময়েরও ওষুধ বের হয়ে গেছে। যক্ষা রোগটি জীবাণু শ্বাসের সাথে শ্বাসনালের সাহায্যে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই রোগটি সংক্রামিত হয়ে থাকে "মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টুবরবিউলোসিস" নামক একটি ক্ষুদ্র জীবানোর মাধ্যম থেকে। এই জীবাণুগুলো বাতাসে অনেক সময় ধরে জীবিত থাকতে পারে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, যক্ষা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির পাশে বসলেই যক্ষা হয়ে যায়। কিন্তু এই বিষয়টি একেবারে ঠিক নয় এই রোগটি এভাবে কখনোই সংক্রমিত হয় না। এটি সংক্রমিত হয় যক্ষা রোগীর হাঁচি, কাশি, কফ, মল-মত্র ইত্যাদি দ্বারা হয়ে থাকে। তাছাড়া যক্ষা রোগের জীবাণু বদ্ধ, জনাকীর্ণ ঔষধ খেতে পরিবেশে খুব দ্রুত রোগ বিস্তার হয়ে থাকে।
যে কোন বয়সের যেকোনো সময় এই রোগের কবলে পড়তে পারে। মানুষের দেহে যক্ষ্মার জীবাণু প্রবেশের কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছরের মধ্যে এই রোগের প্রকাশ ঘটে থাকে। দুঃখজনক বিষয় হলো সাধারণত দৌড় দিল লোকদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়।
যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষা সম্পূর্ণরূপে ভালো করা যায়। তাছাড়া দুই ধরনের ক্যাটাগরিতে যক্ষার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। একটি ক্যাটাগরিতে আপনাকে কমপক্ষে পাঁচ মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। এবং আরেকটি ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে নয় থেকে ১২ মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় দুই থেকে তিন মাস ওষুধ খাওয়ার পর আক্রান্ত রোগী একটু সুস্থ অনুভব করলে, সে সময় অনেকেই ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়।
এটি করা রোগের পক্ষে একদমই ঠিক নয়। রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যবহৃত ওষুধ গুলি নিয়মিত পূরণ মেয়াদে সেবন করতে হবে। তা না হলে আবারও রোগীর যক্ষা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় এবং এরকম ক্ষেত্রে আগের ওষুধ কোন প্রকার কাজ করে না। এবং তৈরি হয়ে থাকে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি ও এক্সট্রিম ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি। এর চিকিৎসাগুলো খুব ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না
সে ক্ষেত্রে যক্ষা প্রতিরোধে জন্মের পরপরই আমাদের দায়িত্ব প্রত্যক্ষ শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া দরকার। কাশি হাচি ও পথের মাধ্যমে এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে। তাই রোগীর উচিত রাস্তাঘাটে কাশি হলে রুমাল ব্যবহার করা উচিত। কফ থুথু খেলা থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রতি বছরের বিশ্ব যক্ষা দিবস হয়ে থাকে। যক্ষা রোগের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা থাকার জন্য প্রতিবছর দিবসটি পালন হয়।
১৮৮২ সালে এই দিনে ডঃ রবাট কোচ রক্ষার জীবাণুর সম্পর্কে আবিষ্কার করেন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ের পথ উন্মোচন করেছিলেন। তাকে স্মরণ করার মাধ্যমে এই দিনটিতে যক্ষা দিবস পালিত হয়ে থাকে। তাই এই দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য থেকে বলতে পারে, হা আমরা যক্ষা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।
যক্ষা রোগীর খাবার তালিকা
যক্ষা রোগের খাবার তালিকায় যেসব খাবারগুলো রাখা প্রয়োজন সেগুলো নিচে উল্লেখ করে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক খাবার গুলো কি কি-
- যক্ষা রোগীদের জন্য ভিটামিন এ,ই,সি খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি করে রাখা প্রয়োজন। সেই খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে হলুদ কমলা ফল এবং শাক সবজির মধ্যে রয়েছে আম, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, কমলা, গাজর এসব থেকে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ পাওয়া যায়। এবং ভিটামিন সি তাজা ফলের মাধ্যমে পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে টমেটো, পেয়ারা, কমলা, আম, লেবু, ক্যাপসিকাম ও মিষ্টি চুন। ভিটামিন ই সাধারণত রয়েছে বাদাম, বীজ এবং উদ্ভিজ্জ তেলে পাওয়া যায়।
- দস্তা মাশরুম এবং সেলেনিয়াম ও সূর্যমুখী বীজ, কুমড়ার বীজ, তিল, চিয়া বীজ তাছাড়া শণ সহ বেশিরভাগ বাদাম এবং বীজগুলো ছেলেমেয়ে এবং জঙ্ক উভয়গুলোয় ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে। নিরামিষাসী বিকল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে ঝিনুক, মাছ এবং মুরগির মাংস অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে ভালো হয়।
- ভিটামিন বি- বেশিরভাগ বি কমপ্লেক্স ভিটামিন পুরো শেস্যের সিরিয়াল তাছাড়া বাদাম, ডাল এগুলো ভিজে পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে যারা মাছ মাংস খান তাদের জন্য বি কমপ্লেক্স হিসেবে মাছ, দিয়ে বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ হিসেবে যেমন টুনা, সালমন, সার্টি ফিকেট এবং চরবিহীন মাংস থেকে এগুলো বেশি অংশ পাওয়া যায়।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাড্ডু, চীনা বাদাম ও ড্রাই ফ্রুট তাছাড়া বাদাম মিক্স অন্তর্ভুক্ত করলে প্রোটিনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অন্যান্য কঠিন সমৃদ্ধ খাবার পোনির, ডিম, টোফু এই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো সহজেই শোষিত হয়ে থাকে।
যক্ষা রোগীদের খাবার তালিকা সম্পর্কে এর স্বার্থপর ডায়েট কেই ই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এবং কি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয় সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত।
- অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
- তামাক যত দ্রুত সম্ভব বাঁধবি।
- এবং আপনাকে ক্যাফেইন কিছু সীমার মধ্যে রাখা উচিত।
- সাদা রুটি, সাদা চাল, চিনি ইত্যাদি এরকম জাতীয় পরিষদিতপূর্ণ বাদ দেওয়া উচিত।
যক্ষা কি ছোঁয়াচে রোগ
যক্ষা মানেই ছোঁয়াচে রোগ নয়-
কারণ যক্ষা কেবলমাত্র ফুসফুস সংক্রমিত করে। এবং ফুসফুসের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, কিডনি, হার এবং মেরুদন্ড এই ব্যাকটেরিয়া টি প্রভাব ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে উপসর্গ এবং লক্ষণ ভিন্ন হয়ে থাকে। তাছাড়া ফুসফুসের বাইরে যে যক্ষা হয় তাকে "এক্সট্রাপালমোনারি টিউবারকুলোসিস" বলা হয়ে থাকে।
সেজন্য ফুসফুস কিংবা শ্বাসনালীতে এটি সংক্রমিত হলেই রোগীর শরীর থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এবং শরীরের অন্য অঙ্গে সংক্রমণ হলে সেই রোগীর থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বলা যেতে পারে যক্ষা মানেই যে ছোঁয়াচে রোগ বিষয়টি সেটা নয়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই যক্ষা রোগের লক্ষণ এবং যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে ইতিমধ্যে বিস্তারিত জেনে গেছেন। এখন থেকে আপনি নিজে নিজেই যক্ষা রোগের লক্ষণ ধরতে পারবেন এবং যক্ষা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তার চিকিৎসা নিতে পারবেন।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাই এ পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং এরকম বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ। আসসালামুয়ালাইকুম।
সাগর ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url